Home বিশেষ প্রতিবেদন লোন নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ চালাকি নাকি বোকামি?

লোন নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ চালাকি নাকি বোকামি?

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

লোন করে শেয়ার বাজারে টাকা লাগানোর বিপদ burden শেয়ার বাজারে লাভ করার প্রচেষ্টায় ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনই অসফল হয়। আর দেখা যায় সফল ১% এর মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণত এই বাজারের বাইরেই বিশাল পুঁজির অধিকারী হয়। অর্থাৎ বিশাল পুঁজিতে অল্প অল্প লাভই শেয়ার বাজারে সাফল্যের প্রধান মূলমন্ত্র। তাই শেয়ার বাজারে ট্রেড বা ইনভেস্ট যাই করা হোক না কেন, দুই ক্ষেত্রেই টাকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। হাতে বেশি টাকা থাকলে সুবিধে যে পাওয়া যায় সে ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সেই টাকা যদি লোনের টাকা হয় তাহলে কিন্তু আবার বিষয়টা উল্টো হয়ে যায়, অর্থাৎ সেটা সুবিধার বদলে বেশীরভাগ সময়েই অসুবিধার কারণ হয়ে যায়। কেননা,
#১ শেয়ার বাজার খুবই ভোলাটাইল বা অস্থির শেয়ার বাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ভোলাটিলিটি। এখানে লিস্টেড প্রত্যেকটা শেয়ারের দাম অনবরত ওঠানামা করে এবং দাম কখন কোথায় যেতে পারে সেটা কেউ বলতে পারেনা। আর দাম বাড়ুক বা কমুক কত সময়ের জন্য বেড়ে থাকবে বা কমে থাকবে সেটারও কোনো ঠিক ঠিকানা থাকেনা। আর এটা ভালো খারাপ সব শেয়ারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়। ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার যেগুলোর বিগত ২০-৩০ বছরের দামের চার্ট যদি দেখা যায় দেখা যাবে হয়তো এর মাঝে কোনো একটা বছরে ডবল রিটার্ন দিয়েছে। আবার হয়তো অন্য ৫ বছর তেমন কিছু রিটার্নই দেইনি। শেয়ারের দামের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য অভিজ্ঞ ইনভেস্টাররা ভালো শেয়ার বেছে নিয়ে লম্বা সময়ের জন্য ইনভেস্টেড থাকার পক্ষপাতী হয়। কারণ ছোটো সময়ের ভোলাটিলিটি লম্বা সময়ের বিচারে ন্যাস্যাত হয়ে যায়। কিন্তু নিজের টাকায় ভালো শেয়ারে এভাবে লম্বা সময় চোখ বুজে ইনভেস্টেড থাকা গেলেও টাকাটা লোনের হলে গল্পটা আলাদা হয়ে যায়। লোনের টাকায় সুদসহ লোন শোধ করার বিষয় চলে আসে। তাই এক্ষেত্রে বিনিয়োগের পর লম্বা সময় রিটার্ন না পেলে হিসেবগুলো উল্টোপাল্টা হয়ে যায়। নিজের টাকায় বিয়ার ফেজে চুপচাপ বসে থাকা গেলেও লোনের টাকার ক্ষেত্রে সেটা হয়না। কারণ বিয়ার ফেজ পেরিয়ে আবার কখন বুল ফেজ আসবে সেটা কিন্তু কেউ জানেনা। শেয়ার দাম বাড়ার আগে এক্সট্রা টাইম নিলেও লোন শোধের ক্ষেত্রে কিন্তু ইচ্ছেমত এক্সট্রা টাইম পাওয়া যায়না!
#২ ইনস্টলমেন্ট ও সুদের বোঝা লোন যে শর্তেই নেওয়া হোকনা কেন, আজ বা কাল এককালীন বা ইন্সটলমেন্টে সুদসহ আসল শোধ করতে বাধ্য থাকতে হয়। ফলে একদিকে যেমন নিজের স্ট্র্যাটেজি ঠিকভাবে অনুসরণ করতে সমস্যা হয় তেমনি আবার অন্যদিকে লাভ পেলেও সেই লাভে ভাগ বসাতে থাকে লোনের সুদ।
#৩ লিভারেজ যেন শাঁখের করাত লোন করা টাকা শেয়ার বাজারে ব্যবহার করা মানে আসলে লিভারেজের ব্যবহার করা। এই লিভারেজ আসলে শাঁখের করাতের মতো। অনুকূল পরিস্থিতিতে এটা যেমন বেশি লাভের সুযোগ করে দেয় ঠিক তেমনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লস বড় হওয়ার কারণ হয়। তাই অনভিজ্ঞ হলে কিংবা বাজার সম্পর্কে গণনা ভুল হলে লোনের জন্য বড় খেসারত দিতে হয়।
#৪ এমার্জেন্সি আমাদের জীবনে বিভিন্ন কারণে ফাইন্যান্সিয়াল ইমার্জেন্সি যখন খুশি আসতে পারে। আর সে সময়ে লোন করা ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না। কিন্তু ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে লাগানোর উদ্দেশ্যে লোন করা থাকলে হয় নতুন করে লোন পাওয়া যায় না কিংবা লোনের বোঝা আর বাড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সমস্ত পরিকল্পনা মাঝপথেই ভঙ্গ করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে বাধ্য হতে হয়। ফলে একদিকে যেমন শেয়ার বাজারে লস খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তেমনি অন্যদিকে সুদের বোঝা গোদের ওপর বিষ ফোড়ার মত হয়ে যায়। আরও পড়ুনঃ বিকল্প বিনিয়োগঃ পিটুপি লেন্ডিং। কম ঝুঁকিতে 12% সুদ কিভাবে পাবেন?
#৫ গল্পের পিছনের আরেক গল্প একটু আগে বলা রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার যে গল্পটা অনেককে এই পথ ধরতে অনুপ্রাণিত করে সেটাকে ব্যতিক্রমী বলে ধরে নেওয়াই ভালো। তিনি দূরদর্শী ছিলেন বটে তবে খানিকটা সৌভাগ্যবানও ছিলেন। প্রথম জীবনে লোন করে বিশাল ঝুঁকি নেওয়ার পর যদি দুর্ভাগ্যবশত বাজার তার প্রত্যাশার বিপরীতে যেত তাহলে হয়তো আজ আমরা যে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে চিনি তিনি ঋণের বোঝার চাপেই কোথাও হারিয়ে যেতেন। এই একটা সাফল্যের গল্প কিংবদন্তী হয়ে থাকলেও একই কারণে কতশত বিনিয়োগকারী যে সর্বশান্ত হয়ে গেছে সেগুলো কিন্তু সবাই জানতে পারেনা বা জানতে চায়-ও-না। শেষ কথাঃ আমাদের করনীয় পোড় খাওয়া বড় বড় অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা সবসময়ই লোন নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে সাবধান করেন। কারণ তারা জানেন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটা কোন ভরসাযোগ্য বিকল্প নয়। এই বাজার রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জায়গা নয়। দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে নিজের সাধ্যমত বিনিয়োগ করাই এখানে সম্পদ তৈরীর আসল মন্ত্র। তবে কিছু কিছু পরিস্থিতিতে হয়তো লোনের টাকায় বিনিয়োগ করলে বড় লাভের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। এই যেমন করোনার সময়ই ধরুন, হু হু করে বিশাল একটা ধস নামার পরই ‘ভি’ আকারে রিকভারি হয়েছিল এবং বাজার যতখানি পড়েছিল তার থেকে আরও বেশি উঠে গিয়েছিল খুব কম সময়ের মধ্যেই। তো, কেউ যদি করোনায় ধস নামার পরে লোন নিয়ে ভালো ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দিত তাহলে কিন্তু লোনের সুদের থেকে কয়েক গুণ রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ পেতো! তবে এখানেও কিছু ‘কিন্তু’ আছে। করোনায় বাজার কতখানি পড়তে পারে সেটা আগে থেকে কেউ জানত না। আর বাজার পড়ার পর ‘ভি’ আকারে রিকভারির কথাও অজানা ছিল। আর পরিস্থিতি সামান্য অন্যরকম হলে বাজারের প্রতিক্রিয়াও অন্যরকম হতে পারত। সুতরাং, এই ধরনের বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে যখন বাজার খুব তাড়াতাড়ি কোনো একদিকে মুভ করার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং বাজার সম্পর্কে ভীষণ অভিজ্ঞ কেউ সে ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে পূর্ব-অনুমান করতে পারে তখন তার জন্য লোন করে বিনিয়োগ করার বিষয়টা বিচার্যের বিষয় হতে পারে। তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, লোন নিলেই হল না, নিয়মিত তার ইএমআই-ও চোকাতে হবে। তাই এমন বিশাল পরিমাণে লোন নেওয়া ঠিক হবে না যেটা চোকাতে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। আর এক্ষেত্রে কত সুদ ধার্য হচ্ছে সেই ব্যাপারটার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। উঁচু সুদে লোন নিয়ে বিশাল রিটার্ন পাওয়ার অবাস্তব প্রত্যাশা রাখা যুক্তিযুক্ত হবে না। তাছাড়া লোন শোধ করার অর্থের যোগানের জন্য যেন বিনিয়োগের রিটার্নের উপর ভরসা না করতে হয়। লোন করে বিনিয়োগ করলেও লক্ষ্য থাকবে দূরের দিকেই। অর্থাৎ, চাকরি বা ব্যবসার আয় থেকে যদি ঐ টাকা যোগানো সম্ভব হয় তবেই এই রাস্তায় যাওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে, অন্যথায় নয়। এই বলেই আজকের এই নিবন্ধ শেষ করলাম। এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল। ভালো থাকবেন।

লোন নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বা ট্রেডিং – চালাকি নাকি বোকামি?