শাওন আজহার
চট্টগ্রাম: নগরীর দু’নম্বর গেইট এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বিপ্লব উদ্যান। এর আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে জবরদখল করা ফুটপাত ও নালা উদ্ধারে সিটি কর্পোরেশন নির্বিকার। এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
নগরীর বিপুল সংখ্যক মানুষের বিনোদনের একমাত্র জায়গা ছিল বিপ্লব উদ্যান। বিকেল হলে এখানে সব বয়সী মানুষের ভিড় জমতো। দলে দলে হাঁটতেন, আড্ডা দিতেন।
২০১৮ সালের শেষদিকে সিটি কর্পোরেশন তা বন্ধ করে দিলো। জানানো হলো এক বছরের মধ্যে এটা আধুনিকায়ন হবে, বিনোদনের হরেক রকম সুযোগ-সুবিধা তৈরি হবে। কর্পোরেশনের এ উদ্যোগ দেখে এলাকার মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করলেন। সিটি কর্পোরেশন বিপ্লব উদ্যান আধুনিকীকরণের প্রকল্পের নাম দিলেন ‘সোল স্কোয়ার।’ প্রাণের স্পন্দন। দায়িত্ব তুলে দেয়া হলো বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর। তাদের সাথে চুক্তি করে।
সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে রবিবার স্থানীয়রা জানালেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে। কর্পোরেশনের সহায়তায় জবরদখল করে নেয় বিপ্লব উদ্যানের তিন দিকের ফুটপাত ও পানি চলাচলের নালা। ফুটপাত ও নালার অস্তিত্ব বিলীন করে সেই জায়গা প্রকল্পের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলা হয়। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন পথচারিরা। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তা দিয়ে তাদেরকে চলাচল করতে হয়।
আরও জানালেন, নালা-নর্দমা জবরদখলে নেয়ার পর শুরু হয় বৃক্ষ নিধন যজ্ঞ। সবুজে ভরাবিপ্লব উদ্যানের ভিতরে থাকা বৃক্ষরাজি উপড়ে ফেলা হয়। এরপরও যেগুলো ছিল সেগুলোর কিছু মরে গেছে। উত্তর-পূর্ব কোণে গাছপালা কেটে ফেলে সেখানে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা যায়, বিপ্লব উদ্যানের কোথাও কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা ছিল না। পূর্ব পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মিত হয়েছে দোকান। চুক্তি লংঘন করে বিভিন্ন সাইজের দোকান তৈরি করা হয়। ১৫০ বর্গফুটের দোকান নির্মাণের কথা থাকলেও প্রতিটি দোকান ২শ বর্গফুটে বর্ধিত করা হয়েছে। দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেও দোকান বসানো হয়েছে। অবৈধভাবে নির্মাণের কথা গোপন রেখে দোকান বেচে দেয়া হয়েছে বিভিন্নজনের কাছে। এভাবে কার্যত জনসাধারণের বিনোদনের সুবিধাকে রুদ্ধ করে বিপ্লব উদ্যানকে বাণিজ্যিক স্থাপনায় পরিণত করার অপপ্রয়াস হয়েছে।
এসব কিছু হয়েছে কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের চোখের সামনে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরে পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি অনুসারে সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার কথা এক বছরের মধ্যে হলেও, কেবল দোকান ছাড়া অন্যসব কাজ অসমাপ্ত রাখা হয়। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে কর্পোরেশন। সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব পাওয়ার পর চলতি গত ১৫ আগস্ট বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন ও গণশুনানিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন। জনসাধারণ আশা করছেন জবরখল করা ফুটপাত ও নালা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে জনদুর্ভোগ কমাবেন। তাছাড়া যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থার মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া আবশ্যক।