বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
আগরতলা (ত্রিপুরা) ভারত:
২০১৮ সালের ৩মার্চ। এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ত্রিপুরায়। টানা পঁচিশ বছরের বামপন্থী সরকারকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার।
তারই দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে পুনরায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দাঁড়িপাল্লায় বাকযুদ্ধে সন্মুখ সমরে সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষ।
নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দিনটিকে মুক্তি দিবস হিসেবে পালনের ঘোষনা দিয়েছেন। অন্যদিকে বিরোধী আসনে থাকা বামদলগুলির প্রধান শরীক সিপিএম ৩মার্চ দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের শক্তঘাটি হিসেবে পরিচিত ত্রিপুরার রাজনীতিতে ঘটে যায় এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ক্ষমতাচ্যূত হয় মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন ২৫ বছরের ক্ষমতাসীন বামপন্থী সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নেতৃত্ব ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি-আই পি এফ টি জোট সরকার। ৩মার্চ হয় ফলাফল ঘোষনা। সেই থেকে এইদিনটি নতুন করে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে রাজ্যবাসীর কাছে। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কেটে গেছে দুটি বছর।
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব স্বস্ত্রীক পূজো দিতে আসেন রাজ্যের প্রসিদ্ধ শক্তিপীঠ উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে। তার সঙ্গে ছিলের রাজ্যের পর্যটন ও পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায়, মাতাবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিপ্লব ঘোষ সহ অন্য দলিয় নেতা কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে প্রশাসনিক স্তরে চরম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরে পূজো শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে মায়ের কৃপায় ত্রিপুরার মাটি থেকে সিপিএম সরকারকে উৎখাত করতে পেরেছি, আজকের দিনে তার আশির্বাদ নিতেই এখানে আসা।
তিনি জানান, ত্রিপুরাকে সবদিক থেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গড়ে তোলাই হবে তার সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী আজকের এই স্মরণীয় দিনটিকে ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন রাখেন। তার দল বিজেপি আজকের দিনটি গোটা রাজ্যের নানান অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালন করছে। সন্ধ্যায় রাজ্যের প্রতিটি মন্ডল অফিসে হবে অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যূত হয়ে বিরোধী আসনে থাকা বামফ্রন্টের প্রধান শরিক সিপিএম দুপুরে সাংবাদিক সন্মেলন করে ৩মার্চ দিনটিকে রাজ্যে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালনের ডাক দিয়েছে। সিপিআইএমের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাস অভিযোগ করে বলেন, রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই পিছিয়ে গেছে ত্রিপুরা। প্রতিদিন তলানিতে ঠেকছে আইনের শাসন। অর্থনৈতিক ভাবেও ত্রিপুরা পিছিয়ে গেছে কয়েকগুণ। গ্রামে মানুষের হাতে কাজ নেই । বেড়েছে খুন, মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা। সরকারি দপ্তর গুলিতে ফাইলের পাহাড় চড়ছে। যে প্রলোভন আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ত্রিপুরার মানুষের ভোটে ক্ষমতা দখল করেছিলো, তা পূরনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এই বিপ্লব দেবের সরকার। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে আজ হাহাকার করছে। তাই এই দিনটি মানুষ কালোদিবস হিসেবেই মনে রাখবেন বলে জানান সিপিএম রাজ্য সম্পাদক।
যদিও নতুন সরকারের বর্ষ পূর্তিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার , সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক সহ বিজেপি দলের অন্য কার্যকর্তারা। তবে রাজনৈতিক এই বাকযুদ্ধের মাঝে রাজ্যের সাধারণ মানুষ কিন্তু চায়, ভালো কাটুক তাদের প্রতিটা সকাল।