বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পরীক্ষা কমিটির কেউ দায় এড়াতে পারেন না জানিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, সার্বিক তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে এমডির রুম থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। আরও অনেক ব্ল্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ জাতীয় পতাকাবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস করেছেন জাহিদ নামে এক অফিস সহকারী। নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে একটি কমিটি রয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এখানে অনেক লোকের চাকরি হওয়ার কথা। তারা দায় এড়াতে পারেন না। এই ঘটনায় যাদের দায় রয়েছে, প্রশ্নফাঁস করেছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বিমানে নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় ২১ নভেম্বর ডিবি লালবাগ প্রথম দিনই রাজধানীর কাউলা এলাকা থেকে আওলাদ হোসেন (২১), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), এনামুল হক (২৮), হারুন-অর-রশিদ (৪০) ও মাহফুজুল আলম (৩১) নামে বিমান বাংলাদেশের পাঁচ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রের সফট কপি, টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্প, মোবাইল নম্বর, ডায়েরি ও পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এরপর প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমানের আরও ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. মাসুদ (৩৪), জাহিদ হাসান (২৮), সমাজু ওরফে সোবহান (৩০), জাবেদ হোসেন (২৮) এবং জাকির হোসেন (২৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত হাতে নগদ দেড় লাখ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক-৩২টি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প-১৭টি, মোবাইল ফোন ১৪টি, মোটরসাইকেল, ডায়েরি ৩টি, ফাঁস হওয়ার প্রশ্নপত্রের হার্ডকপি ও সফটকপি এবং নিয়োগ প্রার্থীদের প্রবেশপত্র-৫৪টি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, পরীক্ষা কমিটির মূল জিএম এডমিনের কক্ষে প্রশ্নপত্র রেডি হয়। সেখান থেকে একজন প্রশ্নপত্রের ছবি তোলেন। ২০ নভেম্বর বিমানের লোগো মুছে ফেলে ৮০টা প্রশ্ন টিক চিহ্ন দিয়ে আরও দুজনের কাছে সরবরাহ করে। ওই দুজন মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়। আবার ১৯ নভেম্বরের সামারাইজড প্রশ্নের ফটোকপি করতে এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি স্মার্ট ফোন সাথে নিয়ে গিয়ে ফটোকপিকালে ছবি তুলে সোবহানের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোবহান আরও কয়েকজনের কাছে সরবরাহ করেন।
তিনি বলেন, বিমান কর্তৃপক্ষ প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র তৈরি, প্রিন্টিং ও পরীক্ষার আয়োজনের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন। যাবতীয় কার্যক্রম তারা করেন। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এমডি সাহেবের অফিস সহকারী জাহিদ ছবি তুলে তা ফাঁস করেন। যারা দায়িত্বে ছিলেন দেখভালের তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি।
হারুন জানান, আদালতে গ্রেপ্তাররা বলেছেন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন নিয়োগের সময় একইভাবে তারা বিমান বাংলাদেশের নিয়োগ সংক্রান্ত অপকর্ম করেছেন, চুরি করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও যাবতীয় ডিজিটাল তথ্য-উপাত্তে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা অর্থের বিনিময়ে আগেও অপকর্ম করেছেন। ২১ নভেম্বরেও তারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে নগদ টাকা সংগ্রহ, প্রশ্নসহ উত্তরপত্র বিতরণ করেছেন। তারা আরও অনেকের নাম বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।