বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
বিলোনিয়া (ত্রিপুরা)
করোনার আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে গেল এখানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য। প্রশাসনের মৌখিক আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হল বিলোনিয়ার মুহুরিঘাট ইন্দো-বাংলা আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত শুল্ক বাণিজ্য কেন্দ্রটি। নিশ্চিত ক্ষতির মুখে দুই রাষ্ট্রের প্রায় ৩০ জন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে আর্থিকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে দুই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শুল্ক সূচক।
বাংলাদেশের ফেনীর মুহুরি নদীর পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী শহর বিলোনিয়া। সেখানেই রয়েছে দুই রাষ্ট্রের ইন্দো-বাঙলা চেকপোষ্ট। পরবর্তী কালে এই রাস্তা ধরেই তৈরি হয় মুহুরীঘাট ভারত-বাংলা আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত শুল্ক বাণিজ্য কেন্দ্র।
আগরতলার আখাউড়া চেক পোস্টের পর এটাই হচ্ছে ব্যাবসায়ীদের সবচেয়ে পছন্দের বাণিজ্য কেন্দ্র। সেইমূলে এই স্থল বন্দরটি দিয়ে প্রতিদিন চলে রমরমা বাণিজ্য। বিশেষকরে সিমেন্ট, পাথর, কয়লা আমদানি হয় বাংলাদেশ থেকে। তবে বিশ্ব জুড়ে নোভেল-১৯ করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ব্যাপক ক্ষতির মুখে এই বন্দরের বাণিজ্য।
দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার শঙ্কর দাসের এক মৌখিক ফরমানকে কেন্দ্র করে সংকট চেকপোষ্ট সংলগ্ন এলাকাতে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্থল বন্দরের মাল আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করায় তৈরি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের দিকে থেকে আসা সমস্ত প্রকার মালের গাড়ী দাঁড়িয়েছিল সীমান্তে। এই মাল পুনরায় বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে নিলে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যাবসায়ীরা। গত সোমবার ভারতের দিকে থাকা ব্যাবসায়ীরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সুপারিনটেন্ডেন্ট রামকৃষ্ণ বর্মনের সাথে। এরপর সকলে মিলে দেখা করেন দক্ষিণ জেলার জেলা শাসক দেবপ্রিয় বর্ধনের সাথে। অবশেষে রামকৃষ্ণ বর্মন ও ব্যাবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে সোমবার ভারতের দিকে গাড়ি ঢোকার অনুমতি দেন জেলা শাসক।
অনুমতি পাওয়ার পর, সোমবার একদিনেই ৭৯টি মালবাহী ট্রাক প্রবেশ করে বন্দরে। এর মধ্যে ১০৪ মেট্রিক টন কয়লা, ৯৫০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ও ১৪৪ মেট্রিক টন পাথর ছিলো বলে জানান সুপারিনটেন্ডেন্ট রামকৃষ্ণ বর্মন। তাতে একদিনেই ভারতীয় কোষাগারে ১৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার শুল্ক জমা পড়ে। একদিনের এই হিসেব থেকেই অনুমান করা যায় যে বন্দর বন্ধ থাকার ফলে দুই দিকেই কি পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তার পরেও স্বাস্থ্য আধিকারিকের দ্বারা সীমান্তে নিয়োজিত ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের দাবি কোন ভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসা মালবাহী গাড়ীর চালককে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেওয়া যাবে না। ফলে পুনরায় স্তব্ধ হয়ে যায় আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্য ।
বুধবার ভারতীয় সীমান্তে এই বানিজ্যের সাথে যুক্ত প্রায় ৪৫ জন দিন-মজুর ও ব্যাবসায়ীরা তাদের ক্ষোভের কথা জানান। নাম প্রকাশে অনিছুক এক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেশী। ব্যাবসা বন্ধ থাকলে শুধু রাজস্ব ক্ষতি হবে না, কালোবাজারিও শুরু হয়ে যাবে।
এই বন্দর থেকে প্রতিমাসে ৬০ লক্ষ টাকার উপর শুল্ক পায় সকার। এই বছর এই শুল্ক বাণিজ্য কেন্দ্রের লক্ষ্যমাত্রা ৮ কোটি টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই সব দিক বিবেচন করলে বিলোনিয়ার এই মুহুরিঘাট আন্ত শুল্ক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রটি দুই রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে বেশ গুরুত্ব পূর্ণ। সব দিক বিবেচনা করে করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য দপ্তর যথাযথ স্বাস্থ্য পরিক্ষার ব্যাবস্থা করে বন্দর চালু রাখার দাবী জানান তারা।
অন্য দিকে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় ত্রিপুরায় আগরতলা আখাউয়া সীমান্ত ও সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুর বাণিজ্য কেন্দ্রে এই ধরনের কোন বিধিনিষেধ না থাকায় সেখানে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য চলছে অনান্য দিনের মতই। বিলোনিয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, সরকারের কেন্দ্রিয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।