বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে ধস নেমেছে এভিয়েশন ব্যবসায়।
দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে এখন পর্যন্ত তেমন প্রভাব পড়েনি করোনার। তবে, একেবারে বিপর্যস্ত আন্তর্জাতিক রুট। সীমিতভাবে কয়েকটি রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট যাতায়াত করে। দেশীয় বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটেও ফ্লাইট অপারেশন করে। করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে অনেক দেশ আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। তাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে এয়ারলাইনসমূহের ইউটিলাইজেশন পরিকল্পনা।
জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সংস্থাটির সাবেক পরিচালক, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বিজনেসটুডে২৪ কে বললেন, ঠিক এই সময়ে সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতি বিমানের। অভ্যন্তরীণ পথে তাদের তেমন ফ্লাইট নেই। আন্তর্জাতিক রুটের শোচণীয় অবস্থা। অনেক এয়ারক্রাফট বিমানের। ৬টা ড্রিমলাইনার, ৪টা ৭৭৭ এবং ৪টা ৭৩৭। এগুলো তারা ব্যবহার করতে পারছে না। বসে আছে। অর্থাৎ এগুলোর আয় বন্ধ। আয়ের উৎস স্থগিত। কিন্তু অন্যান্য খরচ চলছেই। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, বিদেশি পাইলট, কেবিন ক্রুদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। প্রায় ৪২০০ কর্মী। এত বড় মাথাভারি প্রশাসন কি দিয়ে চলবে। বললেন, খুবই করুণ অবস্থার দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। তা থেকে কখন আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে সেটা অনিশ্চিত বলে অভিমত কাজী ওয়াহিদুলের।
বিমান দিল্লি, কলকাতা, সিঙাপুর, কুয়ালালামপুর, দোহা, মাসকাট, জেদ্দা, মদিনা, রিয়াদ, দাম্মাম, দুবাই, আবু ধাবি, লন্ডন মানচেষ্টার, সিঙাপুরসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
ইউএসবাংলা ৮টি আন্তর্জাতিক রুটে সার্ভিস দেয়।
আন্তর্জাতিক পথের এয়ারক্রাফট ইউটিলাইজেশন পরিকল্পনা থাকে বিমান সংস্থাগুলোর। চলমান অবস্থায় তচনচ হয়ে গেছে তা। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পথে তাদের যে পরিষেবা তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এয়ারক্রাফট বসে থাকবে। কিন্তু লিজ কস্ট তো মওকুফ নেই। ব্যাংক ঋণে লিজ নেয়া হয়। লিজের টাকা, ব্যাংকের টাকার সুদ তো পরিশোধ করতে হবে। খরচ ঠিকই আছে, কিন্তু নেই আয়। এরকম অসহনীয় পরিস্থিতি বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর। ওয়াহিদুল আলম বললেন, উৎপাদন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ আছে অন্য শিল্পে। কিন্তু এভিয়েশন শিল্পে তা নেই। কারণ, উড়োজাহাজের কোন আসন খালি যাওয়া বা যাত্রা বাতিল করা মানে তা পচে গেল।
শাহজালাল, শাহ আমানত এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর-এই ৩টি বাংলাদেশে। আর অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর ৭টি। ২৮টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পরিষেবা রয়েছে বাংলাদেশে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালে গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছে শাহজালাল দিয়ে। ২০১৯ সালে তা আরও বেড়েছে। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে হ্রাস পেয়েছে ব্যাপকভাবে। ফেব্রুয়ারিতে হ্রাস পেয়েছে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ। চলতি মাসে অনেক রুটে যাতায়াত স্থগিত বা সীমিত। যাত্রী সংকটে যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে।
আইএটিএ-র অনুমান অনুসারে চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন খাতে ক্ষতির পরিমান হবে ১১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বড় বড় এয়ারলাইন্স অনেক রুটে সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। অবশ্য ঐ হিসাব ছিল ১১ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ যাত্রী কমে যাওয়া হিসাব করে। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে ক্ষতির পরিমান আরও বেশি হবে।
পরিসংখ্যান গবেষণা সংক্রান্ত সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’-এর তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে মোট ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ পর্যন্ত ৫৮৩৯ জনের প্রাণ কেড়েছে এই ভাইরাস। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের গ্রাসে গোটা বিশ্ব। ১৫২ দেশে থাবা বসিয়েছে।