দিল্লি: বিয়ে এবং শেষকৃত্য। মাঝে কেবল ১২ দিনের তফাত। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার সাক্ষী থাকল হিংসা-বিধ্বস্ত দিল্লি। মঙ্গলবার দাঙ্গাবাজ দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ বছরের আশফাক হুসেন। এ মাসেরই ১৪ তারিখে তসলিন ফতিমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিন বাঁধা পড়েছিল চার হাত। দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এই বন্ধনের মেয়াদ মাত্র ১২ দিন!
এই ১২ দিনে মাত্র একবারই আশফাক আর তসলিন একসঙ্গে খেতে বসতে পেরেছিলেন। ভেবেছিলেন, গোটা জীবন তো পড়ে আছে, একসঙ্গে সবটুকু ভাগ করে নেওয়ার জন্য। “কিন্তু আমি তো ভাল করে জানতেও পারলাম না, মানুষটা কেমন ছিল।”– কান্না উপচে পড়ছে তসলিনের গলায়।
পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদ এলাকার গোকুলপুরীর গোটা বাড়িতেই থামছে না কান্নার রোল। বুলন্দশহরের মেয়ে তসলিনের সঙ্গে বাড়ির ছেলের বিয়ে হয়েছিল ক’দিন আগেই। রীতি-নীতি সব পালন করা শেষ করে সবে থেকেই সংসার করা শুরু করেছিলেন নবদম্পতি। রবিবার থেকেই অশান্তি শুরু হয়ে গেছিল গোটা এলাকাজুড়ে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আশফাকের জন্য যত্ন করে রান্না করেছিলেন ফতিমা। দুপুরে খাওয়াদাওয়াও হয় একসঙ্গে। কিন্তু কে জানত, এটাই প্রথম এবং শেষ খাওয়া নবদম্পতির!
পরিবার সূত্রের খবর, আশফাক পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে খেয়ে উঠেই আশফাকের মোবাইলে ফোন আসে, কাছেই একটি বাড়িতে ইলেকট্রিক লাইন মেরামতির জন্য। তখন বিক্ষিপ্ত অশান্তি চলছিল এলাকায়। কিন্তু আশফাক ভেবেছিলেন, বাড়ির কাছেই যাবেন আর আসবেন। সেই যাওয়াই কাল হল।
অভিযোগ, বাড়ি থেকে বেরোনোর পরেই লাঠি, বন্দুক, বোমা নিয়ে একদল দুষ্কৃতী ঝাঁপিয়ে পড়ে। জয়শ্রীরাম স্লোগান দিতে দিতে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। ভয় দেখায় আগুন লাগিয়ে দেবে গোটা মহল্লায়। এই ঝামেলার মুখেই পড়ে যান আশফাক। গুলি লাগে তাঁর গায়ে। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে রক্তাক্ত দেহ।
আশফাকের বাবা, পেশায় সব্জিবিক্রেতা, তখনই ফিরছিলেন মসজিদ থেকে। ছেলেকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছোটেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। আল হিন্দ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, মারা গেছেন আশফাক। জিটিবি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় তাঁর দেহ।
আশফাকের কাকা মুক্তার আহমেদের অভিযোগ, রবিবার রাত থেকেই গুন্ডারা ঘুরছিল এলাকায়। মারদাঙ্গা চলছিল। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে, মঙ্গলবার পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়। ওরা মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেয়। একটা স্কুলও পুড়ে যায়। “আমরা অনেক বার পুলিশকে ফোন করে সব জানিয়েছি। কিন্তু কেউ আসেনি। এমনকি আমার ভাইপোর গায়ে গুলি লাগার পরে অ্যাম্বুল্যান্সও পাইনি আমরা।”– ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রৌঢ়।
সদ্য শেষ হওয়া বিয়ের অনুষ্ঠানের চিহ্ন এখনও লেগে আছে বাড়ির ইতিউতি। নতুন পোশাক, গয়না এখনও তুলে রাখা হয়নি নববধূর। তারই মধ্যে প্রকট হয়ে উঠেছে মৃত্যুর হাহাকার। দেহের জন্য এখনও হাসপাতালের সামনে বসে আছে পরিবার। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, “কার দোষে মরতে হল আমাদের ছেলেটাকে!”
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক