Home First Lead গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ৪২টি গ্রাম প্লাবিত

গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ৪২টি গ্রাম প্লাবিত

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কুমিল্লা: বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ৪২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

রাত পৌনে ১২টায় বাঁধ ভাঙার এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বুরবুড়িয়া এলাকায় ভাঙন প্রায় ৩০০ ফুট ছাড়িয়েছে। অস্বাভাবিক স্রোত এবং পানির উচ্চতায় প্লাবনের কারণে প্রতিনিয়ত তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বেড়িবাঁধের আশেপাশের লোকজন আশ্রয় নিয়েছে উঁচু রাস্তার উপরে। অনেকেই এখনো আটকা পড়ে আছে প্লাবিত এলাকায়।

স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছে ভাঙনকবলিত গ্রামগুলোর প্রায় ২৫% লোক আটকা পড়ে আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ওই স্থানের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে।

বাঁধ ভেঙে সাথে সাথে বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ারবাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কন্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর,জগৎপুর ও গোসাইপুর গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও স্থাপনা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীর বাঁধে আশেপাশের শতাধিক পরিবার ঘর থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুড়বুড়িয়া গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা শোকে কাতর৷ বাড়িঘর হারিয়ে কাতর হয়ে আছে।

বুড়বুড়িয়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, রাত সাড়ে ১১ টায় নদীর পানি হঠাৎ শুশু শব্দ শুরু হয়। তারপর বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। প্রথমে বাঁধটি ১০ ফুটের মত ভাঙে। তারপর ২০ ফুট করে বড় আকারে ভেঙে পরে।

মহিষমার গ্রামের গৃহবধূ ফাহিমা কান্না করতে করতে বলেন, তাঁর ১০ বছরের সাজানো গোছানো সংসার গোমতী পানি আমার সব কেরে নিয়ে গেল।

সোমা রানী বলেন, কোলের বাচ্চাটা নিয়ে সারারাত না ঘুমিয়ে ছিলেন। বাড়িঘর সব ডুবে গেলো পানিতে । এখন কই থাকবেন সেই ভাবনার কথা মনে করে আঁচলে চোখ মুছেন।

গোমতীর বাঁধের ভান্তি, কামারখাড়া, বালিখাড়া অংশে পাঁচ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে৷ শিশুরা আতংকিত অবস্থায় আছে। বন্যা আক্রান্ত পরিবারগুলোর মাঝে দ্রুত খাবার পানি শুকনো খাবার প্রয়োজন।

শিকারপুর গ্রামের মজিদ জানান, রাত থেকে পানি বাড়তে বাড়তে পুরো ঘরে পানি। সবাই কোন রকম বের হয় হয়েছেন।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ষোলনল, পীরযাত্রা পুর, সদর, ইউনিয়নসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শংকায় সন্ধ্যা থেকেই লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে এলাকায় মাইকিং করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, ‘১৯৯৭ সালে গোমতীর পানি বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। কিন্তু গত দুই দিনে পানি বাড়ার হিসাব অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে বৃহস্পতিবার বিকালে ১১৩ বিপদসীমার সেন্টিমিটার অতিক্রম করে।