Home Second Lead শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং করলে ফৌজদারি মামলা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং করলে ফৌজদারি মামলা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিংয়ের মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করা যাবে, এমন বিধান যুক্ত করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব অপরাধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এমনকি গভর্নিং বডির সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তারাও শাস্তির আওতায় আসবেন বলে নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে।

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধসংক্রান্ত চূড়ান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে তার প্রতিবেদন সম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন) মো. আব্দুল জলিল মজুমদার।

প্রতিবেদনে চূড়ান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নীতিমালায় বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় ফৌজদারি মামলার বিধানও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক কিংবা গভর্নিং বডির সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া চূড়ান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক, অশিক্ষক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন/বিধি অনুযায়ী শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গেজেট প্রকাশসংক্রান্ত এই প্রতিবেদনটি যেকোনো দিন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় গণমাধ্যমকে বলেন, এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা হয়েছে।

গত ৪ মে বুলিং-র‌্যাগিং প্রতিরোধে নীতিমালা প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়েছিল। তখন হাইকোর্ট কিছু নির্দেশনা দিয়ে চূড়ান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে আদালতে দাখিল করতে বলেছিলেন।

গত ২৯ জুন চূড়ান্ত নীতিমালার গেজেট জারি করা হয়েছে। যেখানে কয়েকভাবে বুলিং ও র‌্যাগিংয়ের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

নীতিমালায় বুলিং-র‌্যাগিংয়ের মৌখিক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কাউকে উদ্দেশ করে মানহানিকর বা অপমানজনক এমন কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে ইত্যাদিকে মৌখিক বুলিং বোঝাবে। যেমন- উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, হুমকি দেয়া, শারীরিক অসমর্থতাকে নিয়ে উপহাস করা বা অনুরূপ কার্যাদি।

আর শারীরিক বুলিং ও র‌্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড়-থাপ্পড়, শরীরে পানি বা রং ঢেলে দেয়া, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেয়া, থুতু মারা, বেঁধে রাখা, কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে/বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেয়া অথবা কোনো কিছু করতে বা না করতে বাধ্য করা, কারও কোনো জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা বা অনুরূপ কার্যাদি বোঝাবে।

এ ছাড়া সামাজিক বুলিং ও র‌্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, পেশা, গায়ের রং, অঞ্চল বা জাত তুলে কোনো কথা বলা বা অনুরূপ কার্যাদি।

সাইবার বুলিং-র‌্যাগিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, কারও সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটু কিছু লেখা বা ছবি বা অশালীন ব্যঙ্গাত্মক কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা বা অনুরূপ কার্যাদি।

সেক্সুয়াল (যৌন) বুলিং ও র‌্যাগিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আপত্তিজনক স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন করা, আঁচড় দেয়া, জামাকাপড় খুলে নেয়া বা খুলতে বাধ্য করা বা অনুরূপ কার্যাদি।

এ ছাড়া এমন কর্ম, আচরণ, কার্যাদি যা অসম্মানজনক, অপমানজনক ও মানহানিকর এবং শারীরিক বা মানসিক যাতনার কারণ হতে পারে, তা যে নামেই হোক না কেন, তা বুলিং ও র‌্যাগিং বলে গণ্য হবে।

চূড়ান্ত নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন এবং কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যারা তিন মাস অন্তর অন্তর শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা, মতবিনিময় সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বা ওয়ার্কশপ আয়োজন করবে।

এই কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং হয় কি না, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য তাদের প্রতি ১০ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। সেই আদেশে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করতে বলেন আদালত। এ নির্দেশ অনুসারে গঠিত কমিটি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে সেটি কয়েক দফা সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রিট দায়ের করে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভির আহমেদ।

এ ছাড়া র‌্যাগ ডের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বন্ধ চেয়ে ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল পৃথক একটি রিট দায়ের করেন আইনজীবী মোহাম্মদ কামরুল হাসান।