মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে ইমাম হোসেন: এখানে বেজার অনুকূলে অধিগ্রহণ করা জমির বন উজাড় করে রাতের আঁধারে মৎস্য প্রকল্পের জন্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। অভিযোগটি উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।
গত ফেব্রুয়ারিতে উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় স্থানীয় সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বেজা কর্তৃপক্ষকে বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে আমরা জমি ছেড়ে দিয়েছি, সে জায়গায় এখন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। কোন দুষ্কৃতকারি যেন মাছ চাষ কিংবা অবৈধ জবরদখল না করে। তিনি এ ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। এরপর আশা করা হয়েছিল যে দুস্কৃতকারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন আরও বেপরোয়াভাবে সেখানে খনন কাজ চলছে।
মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) অফিসের অর্ধ কিলোমিটার উত্তরে নতুন আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন চর নিলক্ষী এলাকায় চলছে ঐ অবৈধ কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা রোধে রয়েছেন নির্বিকার।
মাছচাষের জন্য বনের কেওড়া বন উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। সংরক্ষিত বন পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা তৈরির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এই জায়গা চর নিলক্ষী মৌজার উপর অবস্থিত। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর জন্য অধিগ্রহন করা হলেও সেটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এখানে ফসলি জমিসহ কেওড়া বাগান উজাড় করে দীর্ঘ সময় ধরে একশ্রেণীর প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে এই খনন করছে । একটি কৃষি সমবায় সমিতিকে সেখানে ৫৫৬ একর জায়গা বন্দোবস্তি দেওয়া হয় ২৪ জানুয়ারী ১৯৭৬ সালে। উক্ত জায়গার মধ্যে ৪৫ একর সম্পত্তি জবর দখল করে দিঘি খনন চলছে।
সমিতির সদস্য কামাল উদ্দিন ও সানা উল্ল্যাহ নামে দু’জন জানান, দীর্ঘদিন আগে থেকে এখানে বন ধ্বংস করে মৎস্য প্রকল্প করা হয়েছে। স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে বনের গাছপালা উপড়ে ফেলে খালি করা হচ্ছে। তারপর সময়-সুযোগ বুঝে নিশ্চিত করা হচ্ছে দখল।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল জানান, দীর্ঘদিন এ জায়গাগুলো আমরা ভোগ দখলে ছিলাম। অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য এই জায়গাঅধিগ্রহণ করা হয়। তা আমরা সাদরে গ্রহণ করি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল এই যে আমরা যে জায়গা বেজা কর্তৃপক্ষকে ছেড়ে দিলাম সে জায়গায় এখন কিছু প্রভাবশালী চক্র জবর দখল করে মাছ চাষের আওতায় আনছে। কেন প্রশাসন ও বেজা কর্তৃপক্ষ নিরব? তিনি আরো বলেন প্রশাসনিক উদ্যোগের জন্য আমরা থানায় চলতি ৩ ফেব্রুয়ারী তারিখে বেশ কয়েকজনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রকার প্রতিকার পাইনি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত টিপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি কোন খনন করছি না। ঐখানে আমার কোন দিঘি নেই। যারা কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লা বলেন, ‘যেখানে মৎস্য প্রকল্প করা হচ্ছে, এটি এখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য বেজা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বেজা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ ফারুক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অধিগ্রহনকৃত জমিতে কেউ কোন প্রকার খনন করতে পারবে না। যে বা যারা খনন করেছে সেটা অবৈধ হয়েছে তা আমরা দখল করবো, ভেঙ্গে দেবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।