বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: কাঠের আসবাবপত্রের বদলে গৃহস্থালিতে ঠাঁই করে নিয়েছে প্লাস্টিকের সরঞ্জাম। গ্রাম কিংবা শহরে অতিথি আপ্যায়নে প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। অথচ এক সময়ে এ বেতের শিল্পের ব্যবহার হতো হরদম। সৌখিনতা আর আধুনিকতায় বেত ও বুনন শিল্পের কদর বহু দিনের। বর্তমান সময়েও আভিজাত্যের স্বাক্ষর বহন করছে বেতের শিল্প। তবে সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনার অভাবে ধুঁকছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের ভবিষ্যৎ। সেই সাথে করোনার থাবায় বেগ পোহাতে হচ্ছে বেত শিল্পের কারিগর ও ব্যবসায়ীদের।
এই শিল্পের সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীরা সরকারের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ ও প্যাকেজর আয়তায় আনার দাবি তুলেছেন। অন্যথায় সনাতন পদ্ধতির আদলে বেত ও বুনন শিল্প প্রসার বাধাগ্রসত্ হতে পারে আশঙ্কা করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বেত ও বুনন শিল্প নিয়ে কাজ করছেন এমন কয়েকজন খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ঐতিহ্য ও আবহমান বাংলার রীতি অনুযায়ী চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি দোকান বেত শিল্প কাজ করছে। ধরে রেখেছেন পারিবারিক ব্যবসার ঐতিহ্য।
কাঠ ও বাঁশের শিল্পের পর বেত শিল্প বাংলাদেশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। সনাতন ধারায় চলে আসছে বেত শিল্প। নকশার ধরণ, গুণাগুণ ও আকার অনুযায়ী চেয়ার, টেবিল, দোলনা, বাস্কেট, সোফাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, গৃহস্থালি আসবাপত্র, অফিসে প্রসার লাভ করেছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা সম্ভব হলে সেগুন কাঠের চেয়ে বেতের পণ্য বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এরপরও বেত শিল্পের অগ্রযাত্রা এবং উন্নয়ন কাঙ্খিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি।
বিশ বছরের অধিক সময় বেত শিল্প নিয়ে কাজ করছেন মো. আকরাম। একসময় ব্যবসায় সম্প্রসারণ করে নিজে প্রতিষ্ঠা করেন সামিম ইরন ফার্নিচার দোকান। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বেত ও বুনন শিল্পের বর্তমান হালচাল বিষয়ে।
তিনি বিজনেজ টুডে২৪কে জানান, কাঠ ও প্লাস্টিক শিল্পের ক্রেতার সংখ্যা বেশি। সেদিক থেকে খুব বেশি সৌখিন মানুষ না হলে আসবাব বিক্রি করা সম্ভব হয় না। নতুন করে করোনার ধাক্কায় দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন প্রদান করতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। ক্রেতা না থাকায় মালামাল দোকানে পড়ে থাকায় এর গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে।
এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশিক্ষণের অভাবে এখনও ভালো মানের কারিগর তৈরী হয়নি। সেই সাথে সরকারি সহায়তা নেই। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে পজিটিভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
অনির্বাণ করিম নামে বেত শিল্পের এক বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। করোনার আগেও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার কথা বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা আমরা পাইনি। নিজেদের পুঁজি দিয়ে ব্যবসা চলছে।
নগরীর চাক্তাই আর রিয়াজউদ্দীন বাজারের পাইকারী বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে আসবাবপত্রের কাজ করছি। ক্রেতাও চট্টগ্রামের আশেপাশের। ভালো অর্ডার আসলে চট্টগ্রামের বাইরে আসবাবপত্র পাঠাই।
এস সেট সোফা কিনতে দোকানে এসেছিলেন মো. রেদওয়ান নামের এক ক্রেতা। বিভিন্ন আকারে প্রতি সেট সোফার দাম তার কাছে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার পাকা চেয়েছেন বিক্রেতা।
বেত শিল্পে ভবিষ্যত নেই এমন হতাশায় মধ্যেই চার বছর আগে ব্যবসা বদল করেন আশিষ দেব (অভি) নামের এক ব্যবসায়ী। বর্তমানে কাঠের ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এই শিল্পের কদর কোনো দিন কমবে না। বরং দিন দিন এ পেশার চাহিদা ও পরিধি বেড়ে চলেছে। আধুনিকতার সাথে মিল রেখে এর সরঞ্জাম ও সৌখিনতা যেমন বাড়ছে, তেমনি দামও বাড়তি। দেশের চাহিদা পেরিয়ে বিদেশেও বেত শিল্প প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু নতুন উদ্যোক্তারা এ শিল্পে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। সনাতন আকারে কাজ হওয়ায় এ শিল্পে প্রযুক্তির ছোয়া লাগেনি। এছাড়াও পরামর্শ, বিপণন ব্যবস্থা, উৎপাদন, উদ্ভাবন ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়ে গেছে। ফলে প্রবল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
ক্ষুদ ও কুটির শিল্পের সম্প্রসারণে সরকার এগিয়ে আসলে এ শিল্পকে ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলেও মত দেন তিনি।