Home Second Lead বেশি ভোট পেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না

বেশি ভোট পেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না

সাধারণত দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাধারণ মানুষের রায় বা পপুলার ভোট যাঁর দিকে বেশি পড়ছে তিনিই হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যান। কিন্তু সবসময় যে তা হয় তেমনটা একেবারেই নয়।

দোরগোড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা কে হবেন তার রায় দেওয়ার জন্য প্রহর গুণছে মার্কিন জনতা। কিন্তু মজার কথা হল, মার্কিন জনতার অধিকাংশ যাঁকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভোট দেবে তিনি হোয়াইট হাউসে নাও যেতে পারেন। এর পিছনে রয়েছে মার্কিন সংবিধানের এক জটিল নিয়ম। যার সাংবিধানিক নাম, ‘ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি।’

এখন প্রশ্ন হল এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী?

মোদ্দা বিষয় হল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে। ইলেকটোরাল কলেজ একটি সমন্বয় গোষ্ঠী। বিভিন্ন প্রদেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট থাকে এই ইলেকটোরাল কলেজে। যে রাজ্যের যেমন জনসংখ্যা তেমন সংখ্যক ভোট থাকে। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকেন। সেখানকার ভোট সংখ্যা ৫৫টি। টেক্সাসে ৩৮, ফ্লোরিডায় ২৯। ওয়াইওমিংইয়ে আবার ভোট সংখ্যা মাত্র ৩।

সাধারণত দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাধারণ মানুষের রায় বা পপুলার ভোট যাঁর দিকে বেশি পড়ছে তিনিই হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যান। কিন্তু সবসময় যে তা হয় তেমনটা একেবারেই নয়। জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প—কেউই পপুলার ভোটে জেতেননি। অর্থাৎ মার্কিন জনতার অধিকাংশ চাননি তাঁরা প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসুন। কিন্তু তাও তাঁরা প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন একটাই কারণে, ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে জিতে।

Electoral College & Indecisive Elections | US House of Representatives:  History, Art & Archives
ভোট সংখ্যা এবং নিয়ম

ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোট সংখ্যা ৫৩৮টি। প্রেসিডেন্ট হতে গেলে পেতে হয় ২৭০টি ভোট। তবে পপুলার ভোটের যে কোনও গুরুত্ব নেই তেমনটা নয়। বরং এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন সংবিধানের এক জটিল গাণিতিক নিয়ম। সেই নিয়ম বলবৎ হওয়ারও একটা ইতিহাস রয়েছে। সে ব্যাপারে এই প্রতিবেদনের পরবর্তীতে আলোকপাত করা হবে। আগে জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়ম—ধরা যাক এক্স এবং ওয়াই দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। এবার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ভোট গণনার পর দেখা গেল এক্স ৫০.০১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাহলে ইলেকটোরাল কলেজে ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৮টি ভোট এক্সের পক্ষেই যাবে। অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও একই। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেলেই ইলেকটোরাল কলেজের সব ভোট পপুলার ভোট যে দিকে সেদিকেই যাবে। তখন আর পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার থাকবে না।

কিন্তু জটিল অঙ্কের অবতারণা হয় তখনই যখন দেখা যায় কোনও রাজ্যে কোনও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কাঁটায় কাঁটায় ৫০ শতাংশ বা তার কম ভোট পেয়েছেন। তখন ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরা তাঁদের মতো করে ভোট দেন। এবং সেই ভোট গণনা হয়। গত ভোটে ট্রাম্প যা ভোট পেয়েছিলেন তার চেয়ে অন্তত ৩০ লক্ষ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিন্টন। কিন্তু তাও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে। এছাড়াও বুশ, বেঞ্জামিন হ্যারিসন, রাদারফোর্ড বি হেইজরাও পপুলার ভোটে হেরে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে গরিষ্ঠতা পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

George W Bush does not cast vote for president | World News,The Indian  Express
জর্জ ডব্লিউ বুশ


কিন্তু কেউ যদি ২৭০টি ভোট না পান?

সে ক্ষেত্রে হাউস অফ রিপ্রেন্সেটেটিভস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। এ পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেছিল একবারই। সেটা ১৮২৪ সালে। সেবার ইলেকটোরাল ভোট চারজন প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের পক্ষে ছিল সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট। পপুলার ভোটও তিনি বেশি পেয়েছিলেন। ফলে ধারণা করা হয়েছিল যে তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু চতুর্থ স্থানে যিনি ছিলেন সেই স্পিকার হেনরি ক্লে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জন কুইন্সি অ্যাডামসকে নির্বাচিত করার ব্যাপারে হাউজকে প্রভাবিত করেন। অবশেষে অ্যাডামসই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

Benjamin Harrison - HISTORY
বেঞ্জামিন হ্যারিসন


এমন পদ্ধতির শুরুর ইতিহাস

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকের কথা। তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সার্বিক রূপ পায়নি। তা ছাড়া বিরাট ভূখণ্ডের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে যাতায়াতেরও সমস্যা ছিল। তাই জাতীয় ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ধারণা খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান রচনার সময়ে পপুলার ভোট এবং মার্কিন কংগ্রেসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটি পদ্ধতিকেই খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে একাধিকবার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আজকের এই পদ্ধতিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

We Have Always Loved Ranking Things, Particularly American Presidents |  Literary Hub

বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা

মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা মনে করেছিলেন, পপুলার ভোটে যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে যেটা হবে সেটা হল বড় রাজ্যের আধিপত্য কায়েম। ছোট রাজ্যগুলির কোনও মর্যাদাই থাকবে না। তাই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির শুরু। কারণ ভোট শতাংশ ৫০ শতাংশের কম হলেই এই ছোট রাজ্যগুলির ভূমিকা বড় হয়ে দাঁড়ায়।

যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার যা জনসংখ্যা তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটার সংখ্যার ১২.০৩ শতাংশ। আবার ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোট সংখ্যার ১০.২২ শতাংশ ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে রয়েছে। অন্যদিকে ওয়াইওমিং রাজ্যের লোকসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ০.১৮%। কিন্তু তাদের হাতে আছে তিনটি ইলেকটোরাল ভোট যা ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের ০.৫৬%।

অধিকাংশ মানুষের সমর্থন না পেয়ে ক্ষমতায় যাওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত?

অনেকে বলেন, এটাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক। তার কারণ হল খাতায় কলমে তাত্ত্বিক ভাবে ছোট রাজ্যগুলির ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয় না। বাস্তবে যা হয় তা হল, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা এবং তাঁদের দল বড় রাজ্যের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রেই মনোনিবেশ করেন। যাতে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সমস্ত ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে নিজের দিকে টেনে নেওয়া যায়। তা ছাড়া যাঁর যেখানে শক্তি তাঁরা সেখানেই প্রচারে সবটুকু উজাড় করে দেন। ফলে আগে থেকেই অনেক সময়ে ফলাফল আন্দাজ করা যায় এবং সাধারণ মানুষ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়েস এবং নিউ ইয়র্ক ডেমোক্র্যাটের এবং টেক্সাস রাজ্যটি রিপাবলিকানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

-দি ওয়াল