বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বর্তমানে ব্যাংকসমূহ মূলধনের ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কোন একক গ্রুপ বা গ্রাহককে দিতে পারে। তবে, সেটা আর পারবে না। তা ২৫ শতাংশে নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত নয়া নীতিমালা জারি করেছে রবিবার। আগামী ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে। তার আগেই ব্যাংকগুলোকে ঋণ ও ঋণ সুবিধা সীমার মধ্যে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে কোন ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ কোন গ্রুপকে দিতে পারবে না। বর্তমানে যা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ৩৫ শতাংশের হিসাব হয় সুদসহ, আর এখন কোন গ্রুপের শুধু ঋণকে গণনায় ধরা হবে।
এতদিন একটি গ্রুপ ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড মিলে একটি ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেত। ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন করে এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর কোন ধরনের ব্যাংক কি পরিমাণ বড় ঋণ দিতে পারবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ৩ শতাংশের কম খেলাপি রয়েছে এমন ব্যাংকগুলো তার মোট ঋণের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বড় ঋণ দিতে পারবে। তবে যাদের খেলাপি ২০ শতাংশের বেশি, তাদের ঋণের ৩০ শতাংশ হবে বড় ঋণ।
আর খেলাপি ঋণ ৩ থেকে ৫ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৪৬ শতাংশ, খেলাপি ঋণ ৫ থেকে ১০ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৪২ শতাংশ, খেলাপি ঋণ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৩৮ শতাংশ এবং খেলাপি ঋণ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৩৪ শতাংশ।
কোন ব্যক্তির কোন গ্রুপে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ মালিকানা বা ভোটাধিকার থাকলে তা ওই ব্যক্তির গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। কোনে ব্যক্তি কোন গ্রুপের পর্ষদে থাকলে বা কোম্পানির সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকলে তা ওই ব্যক্তির গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। দুই বা ততোধিক গ্রুপকে এক গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করার কিছু শর্তও দিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আইনের সঙ্গে ঋণ সীমার সামঞ্জস্য নেই- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে আপত্তি আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরিবর্তন এনেছে।
বড় গ্রুপগুলো ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়ার জন্য পরিবারের বাইরে আলাদা কোম্পানি ও গ্রুপ গড়ে তুলছে বলে অভিযোগ আছে। যদিও এসব গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থাকে বড় গ্রুপের হাতেই। ফলে নামে-বেনামে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে যাচ্ছে একই গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান। সেজন্য মালিকানার পাশাপাশি ব্যবসায়িক নির্ভরতার বিষয়টিকে ধরে গ্রুপের মালিকানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন এই নীতিমালা বেশ কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর করা যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক যেমন- ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এএফডিবি), ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইবিআরডি), ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএডিবি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ তহবিল (ইআইএফ), নর্ডিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এনআইবি), ক্যারিবিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (সিডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং কাউন্সিল অব ইউরোপ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (সিইডিবি)। এছাড়া সরকারি খাতের বড় বড় প্রকল্প এ নীতিমালার আওতার বাইরে থাকবে।