বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ব্রাজিল গরুর গোশত রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশে। কয়েক বছর ধরে তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। সস্তায় দেশটি গোশত রপ্তানি করবে।
গত এপ্রিলে প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (তখনকার বিনিময় হারে ৪৯৫ টাকা) বাংলাদেশে রপ্তানি করতে প্রস্তাব দিয়েছিল ব্রাজিল। সে সময়েঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত কমবেশি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় সনদ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। রাজধানীর বাজারে এখন প্রতি কেজি ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরু ও পোলট্রি মাংস উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের অনেক মুসলিমপ্রধান দেশেরই ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির অনুমতি রয়েছে। বাংলাদেশে এ অনুমতি নেই। রাষ্ট্রদূত জানান, ওই অনুমতি পাওয়ার জন্যই ব্রাজিল চেষ্টা করছিল। সনদ পেতে তিনি কীভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন, তা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মন্ত্রীর (তৎকালীন) কাছে যাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলায় লেখা কাগজপত্র দেখিয়ে নানা ধরনের নীতিমালার কথা জানান। তবে আমি এত নীতিমালা বুঝিনি। এক কথায় যেটা বুঝেছি তা হলো, তারা অনুমতি দেননি। আলোচনার জন্য তিনি প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যান ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, শুধু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নয়, ব্রাজিল বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ করতে চায়। কৃষি, ওষুধশিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ নানা খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্রাজিল ও বাংলাদেশ পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জানান, কৃষি বাণিজ্যে তার দেশের অবস্থান অনেকটা পাওয়ার হাউজ বা শক্তিকেন্দ্রের মতো। এক্ষেত্রে ব্রাজিল থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারে বাংলাদেশ। তিনি জানান, ব্রাজিলের মানুষ বছরে মাথাপিছু ১০০ কেজি গরুর মাংস খায়। বাংলাদেশে এ হার অনেক কম। ব্রাজিলে একটি গরুর থেকে দিনে গড়ে ৪৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে পাওয়া যায় সাত-আট কেজির মতো।
পাওলো ফার্নান্দো বলেন, ‘সুতরাং শুধু মাংস রপ্তানি নয়, প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমেও বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে ব্রাজিল। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কর্মসূচি রয়েছে। এজন্য ব্রাজিল সরকার প্রচুর পরিমাণে ওষুধ কিনে থাকে। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও সনদ জটিলতা রয়েছে।
বাংলাদেশি পণ্যের বড় প্রদর্শনী : বিবিসিসিআই-এর সহসভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আগামী ১৫- ১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলোতে প্রথমবারের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রদর্শনী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পাশাপাশি রফতানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ ও তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সাইফুল আলম বলেন, ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিযোগিতামূলক নয়, সহায়তামূলক। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানি বছরে মাত্র ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে ১০০-১৫০ জন ব্যবসায়ী প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য ব্রাজিলে ব্যবসায়িক সংযোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি সয়াবিন, চিনি এবং শিল্পের যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য খোঁজার সুযোগ সৃষ্টি হবে।