Home আন্তর্জাতিক ভারতের লোকসভায় মধ্যরাতে পাশ হলো নাগরিকত্ব সংশোধন বিল

ভারতের লোকসভায় মধ্যরাতে পাশ হলো নাগরিকত্ব সংশোধন বিল

 কাঁটায় কাঁটায় রাত ১২ টা। ভারতের  লোকসভায় নাটকীয় ভাবে পাশ হল নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে। এমনিতেই লোকসভায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এনডিএ-র শরিক দলগুলি নিয়ে সেই গরিষ্ঠতা আরও বড়। কিন্তু এর পরেও বিল নিয়ে ভোটাভুটি চান বিরোধীরা। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১টি। আর বিলের বিপক্ষে ৮০টি ভোট পড়ে। ফলে বিলটি অনায়াসে পাশ হয়ে যায়।

বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন বিলটি অসাংবিধানিক। প্রথমত সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা তা লঙ্ঘন করছে। ওই ধারায় সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়াও সংবিধানের ৫, ১০ ও ১৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে এই বিল। একই মত জানান বিরোধীরা।

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিলের বিপক্ষে জোরালো বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল—এই দুটোই আসলে বিজেপির ফাঁদ। গোটা দেশে বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে সরকার। এর পর ভারতের মুসলিমদের আর দেশ থাকবে না। পরে জবাবি বক্তৃতায় অমিত শাহ বলেন, এই বিল ০.০১ শতাংশই মুসলিম বিরোধী নয়। ভারতের সংখ্যালঘুদের অভয় দিয়ে বলছি, নরেন্দ্র মোদী যতদিন ক্ষমতায় রয়েছেন আপনাদের ভয়ে ভয়ে থাকার কোনও কারণ নেই।

অমিত শাহ বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করেছে কংগ্রেস। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির মাধ্যমে তা করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ না হলে এই পরিস্থিতিই কখনও আসত না।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মুসলিমরা ওই তিন দেশে সংখ্যালঘু নয়। বরং ওই তিন দেশই ইসলামিক রাষ্ট্র। সেখানে মুসলিমদের ধর্মাচারণে কোনও বাধা নেই। বরং নিগৃহীত হয়েছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, পারসি, শিখ, জৈনরা।

অমিত শাহ বলেন, একই যুক্তিতে ভারতে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তখন সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা উত্থাপন করে কেন বিরোধিতা করা হয়নি। কেন সমানাধিকারের প্রশ্ন তখনও ওঠেনি।

অমিত শাহ জানান, এর পরেও পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা মুসলিমরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তা বিবেচনা করে দেখা হবে। তবে রোহিঙ্গাদের কোনওভাবেই ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ, মায়ানমার হল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকতে চাইছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কোনও নথিপত্রের প্রয়োজন নেই। রেশন কার্ডও লাগবে না। এ ব্যাপারে কোনও বিভ্রান্তিকর প্রচারে যেন কেউ কান না দেয়।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিলে সমর্থন করে শিবসেনা। লোকসভায় শিবসেনার নেতারা বলেন, বালাসাহেব ঠাকরে গোড়া থেকেই বেআইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ছিলেন।