উত্তাল ছিল গোটা ভারত। ২৬ বছরের তরুণীকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল হায়দরাবাদের হাইওয়ের উপর। শুক্রবার সকালেই জানা যায় পুলিশ চার অভিযুক্তকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পুলিশ হেফাজতে কি ভাবে মারা গেল? সব দেশের পুলিশ যা বলে থাকে, তারাও তােই বলেছে। ওরা পালাতে চেষ্টা করেছিল। তারপর মৃত্যু হয়েছে এনকাউন্টারে।
যদিও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে, কিন্তু সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ বলছে, বিচার পেয়েছেন ধর্ষিতা। এভাবেই নজিরবিহীন শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। তবে পুলিশ কীভাবে এনকাউন্টারে চার বিচারাধীন বন্দিকে মারল, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এদিন সকালে খবর প্রকাশ্যে আসার পরই পুলিশের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন হায়দরাবাদের মানুষ। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতে ঘটনাস্থলে ছোটেন বহু মানুষ। তাঁরা পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে থাকেন। পুলিশ অফিসারদের লক্ষ্য করে ফুল ছুঁড়তে থাকেন তাঁরা। হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।
ভোররাতে সেই অভিশপ্ত হাইওয়েতেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে চার অভিযুক্তের। পুলিশ জানিয়েছে, তারা পালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই তাদের গুলি করা হয়। ঠিক হয়েছে ভোর ৩টে থেকে ৬ টার মধ্যে? সেই প্রশ্নের উত্তর আসবে সময়েই। তবে যে পরিবার গত কয়েকদিন ধরে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে, একটু স্বস্তি মিলেছে তাদের।
পশু চিকিৎসক সেই তরুণীর বাবা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, অবশেষে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পেল। তেলেঙ্গানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তরুণীর বোন বলেন, ‘একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনার পুনর্নিমাণের জন্য তাদের ওই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখনই তারা পালানোর চেষ্টা করলে গুলি চালায় পুলিশ।
তেলেঙ্গানায় গত সপ্তাহে বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে, যাতে শিউরে উঠেছে গোটা ভারত। ২৬ বছরের ওই তরুণীর আধপোড়া দেহাংশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু (২০) নামে এই চার জনই ট্রাকের কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন, ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণ ও ৩৬২ ঝারায় অপহরণের অভিযোগ আনা হয়।
হায়দরাবাদ গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে গত সোমবারই দিল্লির যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। কালো ব্যান্ড এবং ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান অনেকে।
সাইবারাবাদ পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই তরুণীর স্কুটারের চাকা পাংচার করে দেয় ওই চার অভিযুক্ত। এরপর তাঁকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। টোল প্লাজার কাছে একটি জায়গায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ওই তরুণীকে।
সেখানেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। শ্বাসরোধ করে তরুণীকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরপর তাঁর দেহ জ্বালিয়ে দেয় অভিযুক্তরা।
ওই তরুণীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল হয় সংসদের উভয়কক্ষ। সোমবার রাজ্যসভায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ তথা অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। তিনি বলেন, ধর্ষকদের আমজনতার হাতে তুলে দেওয়া হোক। মানুষই ওদের পিটিয়ে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিক।