Home বিনোদন ভার্চুয়াল বিয়ে। ঢাকার বউ আর কলকাতার জামাই

ভার্চুয়াল বিয়ে। ঢাকার বউ আর কলকাতার জামাই

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কলকাতা: অবশেষে দীর্ঘ প্রেমের পরিণতি। কাজী সাহেব এসে নিকাহ কবুল করালেন। পাত্র-পাত্রী দু’জনেই সেই বিয়েতে তাঁদের সম্মতি জানিয়ে নিকাহ কবুল করলেন। এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতেই পারে এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যেই লুকিয়ে অন্য গল্প। আসলে কুয়েতের পাত্রী বাংলাদেশে বসে নিকাহ করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার দাঁইহাটের এক যুবককে। করোনা আবহে এছাড়া আর কীই বা হতে পারতো?

শুধু তাই নয়, বিয়েতে ভোজ পর্ব থেকে ফোটোশ্যুট কোনওটাই বাদ পড়ল না। আর পাত পেড়ে আত্মীয় স্বজন থেকে নিমন্ত্রিতরা ভোজও খেলেন। সেই বিয়ের সাক্ষী থাকলেন দাঁইহাটের বাসিন্দারা।

শুক্রবার ১৭ অক্টোবর দুপুরে দাঁইহাটের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়ার বাসিন্দা মীর আদম আলির পুত্র মীর আবু তালেব আলির সঙ্গে বিয়ে হল কুয়েতের যুবতী সাহরাম ফতেমার। শরিয়ত মেনেই চার হাত এক করলেন কাজী সাহেব। বিয়েতে আয়োজনের কোনও খামতি ছিল না। রীতিমত কার্ড ছাপিয়ে আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। বাড়ির ভিতরেই ছোট্ট আয়োজন। সেখানে মাংস পোলাও থেকে নানা রকম মিষ্টি পাত পেড়ে বসে খেলেন সবাই।

তার আগে রাজবেশে পাত্র এসে ক্যামেরা সামনে পোজ দিলেন। তারপর সুন্দর সোফায় বসে ল্যাপটপ খুললেন। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে পাত্রীর বাড়িতেও ল্যাপটপ খোলা হল। বাংলাদেশের কাজী উপস্থিতিতে। এখানে পাত্রের দাদু শরিয়ত ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কি না দেখে নিলেন।

বিয়ের পর পাত্র আবু তালেব বলেন, ‘‘আমরা দু’জন দু’জনকে প্রায় তিনবছর ধরে ভালোবাসি। কিন্তু করোনা আবহে সবকিছু গোলমাল হয়ে গেল। তারপরেই দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত হয় ভার্চুয়াল শাদি হবে।’’

কীভাবে আলাপ হল দু’জনের, তা নিয়েও একটি গল্প আছে। দীর্ঘদিন ধরে আবু তালেব কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালে ভেলোরে খ্রীষ্টান মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে আবু তালেব তাঁর দুটি কিডনিই প্রতিস্থাপন করেন। তারপর থেকে তিনি প্রায়ই ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতেন। ২০১৮ সালে কুয়েতের বাসিন্দা পেশায় গাড়ি ব্যবসায়ী মহম্মদ আয়ুব তাঁর বড় মেয়েকে নিয়ে ভেলোরে যান। তাঁরও কিডনির সমস্যা। সে সময়ই আয়ুব সাহেবের ছোট মেয়ে সাহরামের সঙ্গে দেখা হয় দাঁইহাটের যুবকের। কথাবার্তা আলাপ, আর তা থেকে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর দু’জনেই ফিরে যান তাঁদের নিজের নিজের ঠিকানায়।

বাড়ি ফিরেও আবু তালেবের মন কিন্তু পড়ে থাকে কুয়েতের সেই সাহরামের দিকে। কিন্তু হাতের কাছে একটা ফোন নম্বরও নেই যে দু’জনে আলাপ পরিচয় করবে। এরপরেই ফেসবুকে ঘাঁটতে শুরু করেন আবু তালেব। মাস খানেক পরেই ফের কুয়েতের সাহরামের খোঁজ পান ওই যুবক। ফের শুরু হয় প্রেম পর্ব। তারপর করোনার আবহ শুরুর আগেই কুয়েত থেকে সাহরাম তার পরিবারকে নিয়ে বাংলাদেশের ঢাকা চলে আসেন বড় মেয়ের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু শুরু হয় লকডাউন। আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা বন্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। সেই থেকে সাহরামের পরিবার বাংলাদেশেই আটকে পড়েন। কিন্তু তাতে বিয়ে কি বাকি থাকবে!

দু’পরিবারের অনেক কথাবার্তার পর শেষপর্যন্ত ভার্চুয়াল বিয়ে হল শুক্রবার। বাংলাদেশ থেকে পাত্রী সাহরাম ফতেমা বলেন, ‘‘শেষমেশ বিয়েটা হল। এতেই আমরা খুশি। শরিয়ত মেনে আমরা দু’জনে ভার্চুয়াল বিয়ে করলাম। এখন কবে দু’জনে মিলতে পারব জানি না।’’