Home পরিবেশ সুইডেনের গভীর জঙ্গলে ‘ভাল্লুক আশ্রয় খাঁচা’: প্রকৃতির মাঝে নিরাপত্তার দুর্গ

সুইডেনের গভীর জঙ্গলে ‘ভাল্লুক আশ্রয় খাঁচা’: প্রকৃতির মাঝে নিরাপত্তার দুর্গ

ছবি ফেসবুক থেকে

এসব খাঁচা সবসময় খোলা অবস্থায় থাকে, যাতে কোনো বিপদ ঘটলে দ্রুত আশ্রয় নেওয়া যায়। প্রতিটি খাঁচার সাথে সংযুক্ত রয়েছে মাটির নিচে স্থাপিত আধুনিক যোগাযোগ ডিভাইস, যার মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় সাহায্য চাওয়া সম্ভব হয়।

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: সুইডেনের বিস্তৃত সবুজ অরণ্যে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু অদ্ভুত দর্শন খাঁচা — যেগুলো শুধু ভেতর থেকে বন্ধ করা যায়। এসব খাঁচা সবসময় খোলা অবস্থায় থাকে, যাতে কোনো বিপদ ঘটলে দ্রুত আশ্রয় নেওয়া যায়। প্রতিটি খাঁচার সাথে সংযুক্ত রয়েছে মাটির নিচে স্থাপিত আধুনিক যোগাযোগ ডিভাইস, যার মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় সাহায্য চাওয়া সম্ভব হয়।

এই অভিনব নিরাপত্তাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো — বনের নির্জনতা উপভোগ করতে আসা মানুষদের বাদামী ভাল্লুক কিংবা অন্য বন্য প্রাণীর আকস্মিক আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখা। বিশেষ করে সুইডেনের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের গভীর বনভূমিতে বাদামী ভাল্লুকের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। যদিও মাঝে মাঝে শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।

যখন আপনি সুইডেনের উত্তরের ল্যাপল্যান্ড বা মধ্যাঞ্চলের দালারনা, ভার্মল্যান্ডের মতো অঞ্চলে যাবেন, তখন এমন নিরাপত্তা খাঁচার দেখা মিলবে — নিরব সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে বনের নির্জনে। দক্ষিণের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা, যেমন স্মাল্যান্ড অঞ্চলেও এখন পরীক্ষামূলকভাবে এই খাঁচাগুলো বসানো হয়েছে।

এই খাঁচাগুলো শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, স্থানীয় বনকর্মী ও গবেষকদের নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সুইডেন সরকার নাগরিকদের ও দর্শনার্থীদের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত যত্নশীলভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি খাঁচার নির্মাণে স্থানীয় আবহাওয়া, বন্যপ্রাণীর আচরণ ও মানুষের প্রবেশপথের সহজলভ্যতাকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। খাঁচাগুলো তৈরি করা হয়েছে অত্যন্ত টেকসই ধাতু দিয়ে, যাতে ভাল্লুক বা অন্য কোনো শক্তিশালী প্রাণী ভেতরে ঢুকে পড়তে না পারে।

সম্প্রতি সুইডেনের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন করা হবে — যেমন স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি সতর্কতা পাঠানো, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সুবিধা যুক্ত করা এবং খাঁচার কাছে আগত বন্যপ্রাণীর গতি শনাক্ত করার সেন্সর বসানো হবে।

এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে বিশেষভাবে বনভ্রমণের সময় এই খাঁচাগুলোর ব্যবহারবিধি শেখানো হচ্ছে। সরকার চায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে ঘোরাফেরা হোক আনন্দের, ভয়ের নয়।

সুইডেনের পরিবেশ ও আবাস মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০টির বেশি খাঁচা উত্তর ল্যাপল্যান্ড, ভার্মল্যান্ড এবং দালারনার গভীর বনভূমিতে স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের স্মাল্যান্ড ও স্কোনে অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে আরও কিছু স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়াও সুইডেন সরকার নাগরিক ও পর্যটকদের জন্য একটি সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে, যাতে বনভ্রমণের সময় প্রাণী দেখা গেলে কীভাবে আচরণ করতে হবে, কী কী সাবধানতা মেনে চলতে হবে — সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ভাল্লুকের মুখোমুখি হলে জোরে দৌড়ানো উচিত নয়, বরং ধীরে পেছনে সরে আসা এবং নিজেকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করতে বলা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান রক্ষার ক্ষেত্রে সুইডেনের এই পদক্ষেপ ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। নিরাপত্তা ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে কিভাবে সচেতন ও বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়, তার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠছে সুইডেনের এই জীবনরক্ষী খাঁচাগুলি।