* পুনর্বাসনের অপেক্ষায় আট হাজার বন্যার্ত পরিবার
নয়ন দাস:
কুড়িগ্রাম: ‘দুইটা ঘর নদীতে ভাসি গেইচে। একটা কোনোমতে আটকেয়া ছাপরা তুলি আছি। খাওয়াদাওয়ায় খুব কষ্ট হইচে। ভিটা তো নাই, এলা যামো কোটে।’ কথাগুলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের জগমোহনের চর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত আলী হোসেন।
ধরলার তীব্র ভাঙনের শিকার হয়ে সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এমনই আশ্রয় নিয়েছে আবেদুল, রাজ্জাক, নবীর, নজীরেরসহ ৬০ পরিবার। তারা জানান, সদর উপজেলার সারডোব এখন বিধ্বস্ত জনপদ।
দফায় দফায় নদীভাঙনে তাঁদের ভিটার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে গেছে। কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তাই পড়ে আছেন রাস্তার ধারে, বাঁধের ওপরে কিংবা খোলা জায়গায়। হাতে কোনো কাজ নেই, ঘরে ঘরে অভাব। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে এ বছর নদীভাঙনের শিকার আট হাজার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি এখনো। বসতভিটা না থাকায় মালপত্র নিয়ে এসব পরিবার বাঁধ, রাস্তা ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় অনেকেই টিনের চালা, পলিথিন ও তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হয়ে ভিটামাটি হারানো ছয় উপজেলার ছয় হাজার পরিবারের একটি তালিকা করা হয়েছে। আরো একটি তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও সোনাভরির ভাঙনে বিলীন অনেকের ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে বাঁধ ও রাস্তার ঝুপড়িতে। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি ভাঙনকবলিত হতদরিদ্র পরিবারগুলো। বর্তমানে তাদের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের জহির উদ্দিন জানান, নদীভাঙনের তীব্রতার মুখে বাড়ির অনেক মালপত্র ভেসে গেছে। তিনটি ঘরের চাল ভেঙে নৌকায় করে এনেছেন ফাঁকা জায়গায়। সেখানে মাচা করে রেখেছেন টিনগুলো।
ফসল নষ্ট হওয়ায় কাজ নেই বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে। তাই খাদ্য ও অর্থ সংকটে নাকাল ভিটাহারা পরিবারগুলো। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসনের দাবি দুর্ভোগে পড়া হাজারো পরিবারের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার জগমোহনের চর, পাঁছগাছি, যাত্রাপুর, নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, রায়গঞ্জ, ভূরুঙ্গামারীর চরভুরুঙ্গামারী, উলিপুরের বজরা, থেতরাই, চিলমারীর নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার সময় তারা সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পেলেও বর্তমানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য নগদ অর্থ ও ঢেউটিন চাওয়া হয়েছে। এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান ও গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার একটি বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে। এসব সহায়তা পেলে সরকারি নিয়মে তা বিতরণ করা হবে।’