বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: আরব সাগর থেকে উঠে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘তাউতে’ দুদিন আগে আঘাত হানে ভারতের গুজরাট উপকূলে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেখানকার উপকূলীয় এলাকা।
তাউতের দাপট শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে আছে সাগরের পানি। ফলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এর বর্ধিতাংশ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
আর এ লঘুচাপটি দ্রুতই নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে, যা পূর্ণ শক্তি নিয়ে ২৩ থেকে ২৫ মে এর মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকায়। এই সুপার সাইক্লোনের নামকরণ করা হয়েছে ‘যশ’। এর গতিমুখ থাকবে বাংলাদেশের সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম এলাকার দিকে।
বঙ্গোপসাগরের জানা ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন হিসেবে ধরা হয় আম্পানকে। প্রথম সুপার সাইক্লোনটি ছিল ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা সাইক্লোন। বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে গবেষণায় যুক্ত গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্বের ঘূর্ণিঝড়বিষয়ক সবকটি ভূ-উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসের শেষের দিকে আন্দামানে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আমাদের আগামী এক সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। দেশটির আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, শক্তি বাড়িয়ে এই ঘূর্ণিঝড় গত বছরের আম্ফানের মতো সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। আছড়ে পড়তে পারে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে। বর্তমানে তারা ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধির দিকে খেয়াল রাখছেন।
ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এক সঙ্গে দুটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হচ্ছে, একটি বঙ্গোপসাগরে, আরেকটি আরব সাগরে। আগামী ২৩ থেকে ২৫ মে এর মধ্যে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বঙ্গোপসাগরের পৃষ্ঠদেশ। খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ দেশের অনেক অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহও বয়ে চলেছে।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস জানান, তাপপ্রবাহ চলতি সপ্তাহ ধরেই অর্থাৎ ২৫ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বিভিন্ন অঞ্চলে। এ সময় কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। আর মাসের শেষে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।