Home First Lead সরকারি ব্যয়ে ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

সরকারি ব্যয়ে ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

  • তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে: ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা
  • প্রতিটিতে ৭ থেকে ৮ কোটির জায়গায় ১৭ থেকে ১৮ কোটি টাকা খরচ
  • নির্মাণে সৌদি সরকারের কোনো অনুদান ছিল না।
  • আগামীতে আরও ২১৪টি মডেল মসজিদ তৈরি করা হবে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: পতিত সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে  প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তের জন্য ইতিপূর্বে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃকগঠিত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে  এ প্রসঙ্গে বলেছেন সরকারি টাকায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব মসজিদ নির্মাণে সৌদি সরকারের কোনো অনুদান নেই। এক বিলিয়নের এই প্রকল্পে সৌদি আরবের কোনো ফান্ড ছিল না। প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ১৭ থেকে ১৮ কোটি টাকা করে খরচ করা হয়েছে। দুর্নীতি না হলে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকায় করা যেত।

৫৬০টি মসজিদ নির্মাণে খরচ হয়েছিল এক বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের সমর্থকরা বলেছিল এটা সৌদির আরবের ফান্ডের। সৌদি আরব এখানে একটা টাকাও দেয়নি। এই মসজিদের অনেক অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। অনেক ধরনের অনিয়ম। সেটা নিয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে আলাপ হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় তদন্ত করার জন্য কমিটি করে দিয়েছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য প্রকল্পের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গত অক্টোবরে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে কমিটি গঠন করেছিল সেটা বুধবার পুনর্গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) কে আহবায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মহাপরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন),  সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক। তবে, বিভাগীয় শহরের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক কমিটির সদস্য হবেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ( উপ সচিব ) পরিকল্পনা-১  এই কমিটির সদস্য সচিব।

বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। কমিটি লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম কিংবা অন্য কোনোভাবে পাওয়া অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে জানিয়েছেন, পতিত স্বৈরাচারের সময়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে যে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি জানান, আগামীতে আরও ২১৪টি মডেল মসজিদ নির্মিত হবে। এক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন, ঠিকাদার নিয়োগ ও নির্মাণ কাজে মন্ত্রণালয়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকবে।

২০১৮ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ৮৭২২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জায়গার ওপর । এর মধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা (নীচ তলা ফাঁকা) মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ।

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও ৩টি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র । বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মডেল মসজিদ ।