বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
সাদা কাপড়ে জড়ানো কিছু একটা কোলে নিয়ে রাস্তায় বসে রয়েছে ছোট্ট ছেলে। কোথা থেকে কতগুলো মাছি এসে ঘিরেছে তাকে। হাত নেড়ে মাছি তাড়াচ্ছে সে, তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। কাউকে যেন খুঁজছে। একটু দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়, বাচ্চাটির কোলের সাদা কাপড়ের তলায় আসলে রয়েছে ছোট্ট আর এক শিশুর দেহ । প্রাণহীন। তার ছোট্ট হাতটি বেরিয়ে রয়েছে কাপড়ের তলা দিয়ে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের মোরেনা শহরের এই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেতেই শিউরে উঠেছেন সকলে। ওই ছবি বলছে, ছোট্ট দু’বছরের ভাইয়ের মৃতদেহ কোলে নিয়ে বসে রয়েছে আট বছরের দাদা। স্থানীয় এক সাংবাদিকের ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য।
ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, বাচ্চাটিকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে তাকে প্রশ্ন করছেন স্থানীয়রা। শিশুটি জানায়, তার নাম গুলশন। তার বয়স আট। দু’বছরের ভাইয়ের নাম রাজা। একটু আগেই হাসপাতালে মারা গেছে সে। তার বাবা গাড়ির খোঁজ করতে গেছে অন্যদিকে। তাই ভাইকে আগলাচ্ছে সে। মাছি তাড়াচ্ছে ভাইয়ের নিথর দেহ থেকে।
জানা গেছে, অম্বার বদফ্রা গ্রামে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট্ট শিশুটি। সেখানে চিকিৎসা হয়নি। তাই কোনওরকমে একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে, ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ৩০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে মোরেনা জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন রাজার বাবা পুজরাম জাটভ। সঙ্গে বড় ছেলে, গুলশন। তবে শেষমেশ বাঁচানো যায়নি রাজাকে।
ছেলের মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে গিয়ে বাবা দেখেন, অ্যাম্বুল্যান্সটি ফিরে গিয়েছে। এর পরে হাসপাতালকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বলেন তিনি, তবে তা হয়নি। তাই নিথর সন্তানকে কাপড়ে মুড়ে কোলে নিয়েই হাসপাতাল ছাড়েন বাবা। বড় ছেলের কাছে ছোট ছেলের দেহ দিয়ে গাড়ির খোঁজ করতে থাকেন বাইরে। সে সময়েই ধরা পড়েছে এই মর্মান্তিক দৃশ্য। আধঘণ্টা এভাবেই বসে ছিল গুলশন, অপেক্ষা করছিল, কখন গাড়ি নিয়ে ফিরবেন বাবা।
শেষপর্যন্ত গাড়ি পাননি বাবা। যোগেন্দ্র সিং নামের এক পুলিশকর্মী এগিয়ে আসেন এই অবস্থায়। তিনি ফের হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেন এবং পুজরামদের ফেরার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেন।