Home সারাদেশ ইশ্বরদীর গ্রামে মাংস সমিতি, ৩৬০০ টাকায় ৬ কেজি

ইশ্বরদীর গ্রামে মাংস সমিতি, ৩৬০০ টাকায় ৬ কেজি

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী: প্রতিদিন জনপ্রতি জমা করা হয় ১০ টাকা, এতে প্রতি মাসে একজনের নামে জমা হয় ৩০০ টাকা। বছরের হিসেবে জন প্রতি জমা পড়ে ৩৬০০ টাকা। এই টাকায় ইদের আগে একেক জন সদস্য গরুর মাংস পাচ্ছেন প্রায় ৬ কেজি করে।

ঈশ্বরদী পৌর এলাকার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামে গত ৯ থেকে দশ বছর ধরে প্রায় ২৫টি ‘মাংস সমিতি’র প্রায় ৮০০ সদস্যরা এভাবে ইদুল ফিতরের আগে গরুর মাংস সংগ্রহ করে থাকেন। এই এলাকায় এটি একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে অবস্থা সম্পন্ন সবাই এক কাতারে সামিল হয়ে এই মাংস সমিতির সদস্য হন। প্রত্যেক সমিতিতে ২৫ থেকে ৫০ জন করে সদস্য রয়েছেন তবে গরুর ওজন অনুযায়ী প্রকার ভেদে সদস্য সংখ্যা কমবেশি হয়।

এবার ইদুল ফিতরের আগে এক দিনে এসব সমিতির অন্তর্ভূক্ত প্রায় ৪০টি গরু জবাই হয়েছে ঈশ্বরদীর একটি গ্রামে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ (‘মাংস সমিতি’র এসব গরু জবাই করা হয় সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায়। সকাল থেকে গরুর মাংস ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের প্রতিটি পাড়ায় ঈদের আগেই যেন শুরু হয়েছে ইদের আনন্দ।

স্কুল পাড়া, ফরাজী পাড়া, বাঘইল মন্নবী পাড়া, মৌলভী পাড়া, বকশিরচক, মধ্য পাড়াসহ গ্রামের সবগুলো পাড়ায় সব বয়সী মানুষরা গরু জবাই কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ভাগাভাগি করেন ঈদের আনন্দ। সাঁড়াগোপালপুর স্কুল পাড়ার একটি মাংস সমিতির উদ্যোক্তা হাসান চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, শাহ আলম, মো: সাজুসহ বেশ কয়েকজন। গরু জবাই থেকে শুরু করে মাংস কাটাকাটি নিয়ে ব্যস্ত তারা।

এ সময় হাসান চৌধুরী বলেন, আমি গত ৮-৯ বছর ধরে এভাবে মাংস সমিতির মাধ্যমে ইদের মাংস সংগ্রহ করি। এতে একদিকে গরুর টাটকা ও নির্ভেজাল মাংস পাচ্ছি অন্যদিকে বাজারের চেয়ে কম দামে কিনতে পারছি। এছাড়া যারা ৭০০ টাকা কেজি গরুর মাংস কিনে খেতে পারেন না তারা প্রতি দিন দশ টাকা অথবা প্রতি মাসে ৩০০ টাকা জমা করে বছর শেষে প্রায় ৬ কেজি করে মাংস পাচ্ছেন।

বাঘইল মন্নবী পাড়ার নবাব মোড়ে এক স্থানেই জবাই হচ্ছিল কয়েকটি গরু। নবাব মোড়ের এই মাংস সমিতির সদস্য আনোয়ার হোসেন রিপন জানান, আমাদের সমিতিতে ধনী-গরীব সবাই সদস্য। ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এখানে ধনী-গরীব ভেদাভেদ ভূলে সবাই এক কাতারে সামিল হয়ে কেউ একজন সদস্য বা কেউ ২ জন সদস্যের আনুপাতিক হারে টাকা জমা করেন বছর ধরে।

বছরে শেষে ইদের আগে আমরা সবাই মিলে আনন্দচিত্তে মাংস ভাগাভাগি করে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন আরো মজবুত করার চেষ্টা করি। সাঁড়াগোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী সিদ্দিকুর রহমান টিনু বলেন, আমরা স্কুলের শিক্ষক কর্মচারি ও স্থানীয় বন্ধু-স্বজনরা গত কয়েক বছর ধরে এ ভাবে ইদের আগে নিজেরা হাট থেকে গরু কিনে এনে স্কুল মাঠে জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করি। এই আয়োজনে আমাদের বড় অর্জন সকলে একসঙ্গে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করা।

মাহাতাব উদ্দিন বলেন, এই মাংস সমিতির মাধ্যমে এলাকায় সব বয়সী মানুষের মধ্যে ইদের আগে যে আনন্দ দেখা যায় তা সত্যিই অনুকরনীয়।