বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ থেকে: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর থেকে শাহজীবাজার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠেছে শতাধিক শিল্প-কারখানা। তাতে বিপুল কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে আরও শিল্পায়নের বিশাল সম্ভাবনা। কিন্তু তা থমকে আছে জমির ব্রোকার ও জালিয়াতদের কারণে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা বললেন, ‘আমরা চাই এখানে আরও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠুক, হোক আরও কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তাদের জমি দিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।কিন্তু ব্রোকারদের কারণে উদ্যোক্তারাও আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না, আমরাও তাদের কাছে যেতে পারছি না।’
আরও জানালেন, ব্রোকাররা কয়েকগুণ বেশি দামে যে বিক্রি করে কেবল তা নয়, মূল মালিককে ন্যায্যমূল্যও দিতে চায় না। যা পরবর্তীতে শিল্পোদ্যোক্তাদের সাথে জমির মালিকের অসন্তোষ তৈরি করে।
এখানকার এস এম স্পিনিংমিলস-এর ফায়ার সেফটি অফিসার ফজলু মিয়া এ প্রসঙ্গে জানালেন, এখানে রয়েছে ব্রোকারদের এক বিরাট সিন্ডিকেট। তারা নামেমাত্র মূল্যে জমি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে উদ্যোক্তাদের কাছে। তারপর দখল বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করে, দাবি করে আরও বেশি মূল্য। আবার কিছু লোক আছে, প্রতারণা করে জাল দলিল দিয়ে।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, ৯ নম্বর নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের এ ধরনের একটি চক্রের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা হয়েছে। আর উদ্যোক্তারা এসব জালিয়াতির কারণে শিল্প স্থাপন করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
মরহুম শাহ এ এম এস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তৈরি হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এদিকে নজর পড়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের। এখানে সায়হাম গ্রুপের বিভিন্ন শিল্প-কারখানা রয়েছে। প্রথম এগিয়ে আসে এই শিল্পগোষ্ঠি। এখানে রয়েছে তাদের সায়হাম টেক্সটাইল, সফকো স্পিনিং মিলস, হামিদা বস্ত্র শিল্প, সায়হাম জুট মিলস, সায়হাম কটন মিলস। অবশ্য আরও আগে থেকে রয়েছে শাহজীবাজার বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
মাধবপুরে আরও রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কারখানা, স্কয়ার গ্রুপ, আরএকে গ্রুপ, মেটাডোর গ্রুপ, স্টার সিরামিক-এর কারখানা। জগদীশপুরে হয়েছে যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।
শিল্প-কারখানাগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে তৈরি হয়েছে আবাসিক ভবন, হোটেল, শপিং মল ইত্যাদি।
স্কয়ার টেক্সটাইল মিলস-এর ম্যানেজার মাসুদ লস্কর জানান, পাহাড়ি অঞ্চলবেষ্টিত এ জনবহুল এলাকায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠায় এলাকার বেকারত্বের হারও অনেক কমেছে। প্রচুর অনাবাদি জমি কাজে লেগেছে।
শতাধিক কারখানা গড়ে ওঠেছে এখানে। অবশ্য, কৃষি ও জীবজন্তুর ক্ষতির কারণ হওয়ায় গোটা দুয়েক কারখানা আদালতের আদেশে বন্ধ।
বাদশা কোম্পানির শ্রমিক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, এলাকায় শিল্প হওয়ায় তারা খুব খুশি। এখন আর তাদের অনাহারে থাকতে হয় না, টাকার জন্য কারো কাছে হাত পাততেও হয় না। আমরা এখন স্বাবলম্বী। নিজে রুজি করি, বাপ- মায়েরে দেই। তারা চিকিৎসার সুবিধার জন্য একটি শ্রমিক হাসপাতালের দাবি করে বলে, হাসপাতাল হলে আমরা সহজেই চিকিৎসা সেবা পেতাম। এখন কেউ অসুস্থ হলে নিকটবর্তী মাধবপুর, নয়তো শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জে যেতে হয়।