Home Third Lead ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের ঘর ভেঙ্গে ফেলার জন্য ক্রসচিহ্ন

ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের ঘর ভেঙ্গে ফেলার জন্য ক্রসচিহ্ন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন একখণ্ড জমি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টাকায় সেই জমি সংস্কার করেন রজব আলী। সেখানে ইটের দেয়াল আর টিনের চাল তৈরি করে থাকছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অপরিহার্য ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের মা-বাবাসহ পরিবার।

অনেক কষ্টে ঘর বেঁধে সেখানে সবজির বাগান আর গাছ লাগিয়েছেন মাসুরার রোগগ্রস্ত অসহায় বাবা রজব আলী। ২০১৮ সালে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের আসরে মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। তাদের নিজস্ব জমি না থাকায় প্রধানমন্ত্রী পক্ষে সরকারি জায়গায় দেওয়া হয়।

তাদের সেই ঘর ভেঙে ফেলার জন্য ক্রস চিহ্ন দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে ঘর ভাঙা আতঙ্কে রয়েছে মাসুরার পরিবার।

সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরাদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির পেছনে তিনটি ক্রস চিহ্ন দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের আমার মেয়ের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসলে তিনি আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেই জমিতে ১৫ ফুট পানি ছিল বিভিন্ন দপ্তরে বহুদিন হাঁটাহাঁটি করার পর বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। সেই সময় মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিল দুদিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। ২৬ দিনে মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি হয়। মাত্র দুদিন থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যায় মাসুরা।

তিনি বলেন, এত টাকা খরচ করে এখন এক প্রকার সর্বস্বান্ত। আমি অসুস্থ। আয় করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে।

রজব আলী বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। সরকারিভাবে পাওয়া আট শতক জমিতে ঘর করেছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, সড়ক বিভাগের সীমানার মধ্যে আপনার বাড়ি পড়লে আমাদের করার কিছু নেই। খুবই চিন্তায় আছি। ঘর ভেঙে দিলে নতুন ঘর কীভাবে তৈরি করব।

তিনি বলেন, এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দো-চালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ভেঙে পড়ছিল, দেয়াল খসে পড়ছিল। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এ ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে স্থানীয় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না।

মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরবে। দেশের মানুষ আনন্দ করছে। আমরা তো চিন্তায় আছি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় থাকা সব স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। আমাদের ঘরের পেছনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। খুবই চিন্তায় আছি। ঘর ভেঙে দিলে থাকব কোথায়।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ক্রস চিহ্ন দিলে সরকারিভাবে জমি পাওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে উচ্ছেদের দিন থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবেন। ভুল করেও ক্রস দিতে পারে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।