বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ( বিইআরসি ) আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনায় দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম মাসে মাসে নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। তবে, ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণ ও দামে শৃঙ্খলা আনতে শুনানির আয়োজন করা হয়। শুনানিতে প্রস্তাব করা হয় মাসে মাসে দর নির্ধারণের। ক্যাব এর আইন ও নীতিগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে । কারিগরি কমিটি কিংবা শুনানি পরিচালনাকারী বিইআরসির শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছ থেকে এর সদুত্তর মেলেনি।
আদালতের আদেশ পালন করতে গিয়ে এলপিজির দাম নির্ধারণের এই উদ্যোগে এখনই মাসে মাসে দাম নির্ধারণের নিয়ম চালুর প্রয়োজন আছে কি না, তা পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব দেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘মাসে মাসে মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব বিইআরসি আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। সম্প্রতি সংসদে আইন করে বছরে একাধিকবার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির যে সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে তাও এভাবে নিশ্চিতভাবে মাসে মাসে মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগকে সমর্থন করে না। তাই কমিশন এ ধরনের চিন্তা পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করি। আদালতের আদেশ পালন করা মানে এমন একটি সিদ্ধান্তে আসা নয়।’
শুনানিতে সরকারি কোম্পানির গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। ফলে চিনিশিল্পের মতো পরিণতির দিকে যাবে।
সরকারি চিনিকলগুলোয় চড়ামূল্যে চিনি উৎপাদিত হওয়ার পর তা আর বাজারে বিক্রি করা যায় না উল্লেখ করে তিনি এই শিল্পের ব্যাখ্যা দেন। মূল্যহার নির্ধারণের প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল সাড়ে ১২ কেজি দাম ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা প্রস্তাব করে।
বিইআরসির কারিগরি কমিটি সারা দেশে একই মূল্যে বিক্রির সুবিধায় এর সঙ্গে ক্রস সাবসিডি ফান্ডের অর্থ যোগ করে ৯০২ টাকা করার প্রস্তাব করে। তবে সাবসিডি বাবদ ৩৩৩ টাকা যোগ করা না হলে দাম দাঁড়ায় ৫৬৯ টাকা।
তবে ক্যাবের জেরার জবাবে সাবসিডি বাবদ ওই অর্থ যোগ করার প্রয়োজন নেই বলে জানান এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান খান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিত প্রস্তাবে বর্তমানে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা ৯৩ পয়সা হিসাবে বিক্রি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে। বিইআরসি এই মূল্য ৭২ টাকা ২৪ পয়সা সুপারিশ করে।
এ ছাড়া ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার খুচরা পর্যায়ে ১ হাজার ২৫৯ টাকা করার প্রস্তাব করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, যা কারিগরি কমিটির বিবেচনায় ৮৬৬ টাকা হতে পারে বলে মত দিয়েছে। ৩৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২ হাজার ৫২৫ টাকা, ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩ হাজার ২৪৬ টাকা করার প্রস্তাব করে কারিগরি কমিটি।
কমিটির ভাষ্য, সৌদি আরামকো কোম্পানির সিপি প্রতি টন ৫৩৮ ডলার বিবেচনায় নিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়ায় ৯৫৪ টাকা। বর্তমান ৩৫৬ ডলার বিবেচনায় নিলে দাম দাঁড়ায় ৭৫৮ টাকা।
লাইসেন্সধারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওমেরা গ্যাসের সিইও শামসুল হক আহমেদ, বেক্সিমকো এলপিজির সিএফও মুনতাসির আলম, বসুন্ধরা এলপিজির প্রতিনিধি জাকারিয়া জালাল শুনানিতে অংশ নেন।
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড এলপিজি বাজারজাত শুরু করে। ১৯৯৬ সালে এই ব্যবসায় যুক্ত হয় বেসরকারি উদ্যোক্তারা।