মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে ইমাম হোসেন: মীরসরাইয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। আর স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাষ। বৈচিত্রময় কৃষির উপজেলা মীরসরাই। এই উপজেলায় প্রায় সবধরণের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। সে কারণেই মীরসরাইয়ে শুরু হয়েছে অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরল মুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। যে কোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশী পুষ্টি সমৃদ্ধ। আর সে কারনেই মীরসরাইয়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ।
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ২টি পৌরসভা প্রায় জমিতে কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। আর কৃষকেরা ভাল ফলন আশা করছেন।
উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নে ছত্তরুয়া গ্রামের চাষী জাহিদুল আজিজ নাহিদ জানান, গতবছর মীরসরাইতে সর্বপ্রথম সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছিলেন তিনি। অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, অধিক লাভ হওয়ার কারনে এই ফুলের চাষ করেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি একর জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, কৃষক নাহিদ উপজেলায় সর্বপ্রথম সূর্যমুখী চাষ করেন। তিনি উপজেলার সূর্যমুখী ফুলের বাগানের পথিকৃৎ। কৃষি প্রণোদনার আওতায় অনেক কৃষককে এই বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করি। তার দেখাদেখি আরো প্রায় ৪-৫ টি সূর্যমুখী ফুলের বাগান হয়েছে এই বছর। বর্তমানে যে তেলের সঙ্কট তা পূরণে ভূমিকা রাখবে সূর্যমুখী চাষ। মীরসরাইয়ের আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী।