মেহেরপুর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট
৭দিনে আক্রান্ত ৪৮১, মৃত ১৬
মেহেরপুর থেকে জাহিদ মাহমুদ মেহেরপুরে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। গত ২৪ জুন থেকে জেলায় কঠোর লকডাউন পালন করা হচ্ছে তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। গত ২৬ জুন থেকে গত ২ জুলাই পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১২২২ টি ফলাফলের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮১ জন। যার আক্রান্ত হার ৪৩ শতাংশ। এছাড়া এক সপ্তাহে মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬ জন।
এদিকে মেহেরপুরের শহর ও বিভিন্ন গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত। ফার্মেসীগুলোতে ৯০ শতাংশ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে জ্বর ও ঠান্ডার। তারপরও সামাজিকতার ভয়ে অধিকাংশরাই টেস্ট করাচ্ছেন না। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতেও অনীহা প্রকাশ করছেন। মাস্ক ছাড়াই এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ অভিযান চালালে মাস্ক পড়েন, চলে গেলে আবার খুলে ফেলছেন।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের রাবেয়া ফার্মেসীর মালিক জিয়াউর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে শুধুমাত্র জ্বর, কাশি ও ঠাণ্ডার ওষুধ বিক্রি করছি। সকলকে টেস্ট করার কথা বলছি। কমসংখ্যাক টেস্ট করাচ্ছেন। সচেতনতার অভাব ও সামাজিক কারণে মানুষ টেস্ট করাচ্ছেনা। ফলে নিজেদের ক্ষতি নিজেরায় ডেকে আনছেন।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ৫০টি বেডকে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে রাখা হয়েছিল তা বৃদ্ধি করে শনিবার থেকে ১০০টি বেডে উন্নীত করা হয়েছে।তিনি জানান, শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪৯ জন করোনা পজিটিভ এবং ৫৭ জন উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তবে সকলে আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. নাসির উদ্দীন জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেই আমাদের এই মহামারি মোকাবেলা করতে হবে। মেহেরপুর হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। ১০ জন চিকিৎসক চেয়ে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্যবিভাগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় মোকাবেলা করতে হবে।
এদিকে, জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মুনসুর আলম খান রবিবার সকালের দিকে চলমান কঠোর লকডাউন এর চতুর্থ দিনে লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঢেউ মেহেরপুরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সংক্রমণের হার যাতে কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে চলেছে এবং লকডাউন দেওয়া হয়েছে। লকডাউন যদি সুষ্ঠুভাবে পালিত হয় সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, গত মাসে করোনার সংক্রমণ হার অনেক কম ছিল, গত দু-এক সপ্তাহে হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে ঘরে থাকতে হবে, আপনাদের পরিবারকে বাঁচাতে হবে।
এ সময় পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি বলেন বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের পাশে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
এদিকে, মেহেরপুরে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় মাস্ক পরার অভ্যেস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
রবিবার মেহেরপুর পুলিশের একটি দল শহরের হোটেল বাজার মোড় এবং পুরাতন বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ সময় যে সব পথচারী মাস্ক পরেননি তাদেরকে মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন থানা পুলিশের প্রচারণা টিম।