বর্তমান আইন প্রতিপালন করে দেশে একটি ইটভাটাও গড়ে ওঠা সম্ভব নয়: গোলাম রসুল
জাহিদ মাহমুদ, মেহেরপুর থেকে: মেহেরপুরে ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আর কমছে আবাদী জমি। ইতোমধ্যেই প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি চলে গেছে ইটভাটার পেটে।
বাংলাদেশের ছোট একটি জেলা মেহেরপুর। মাত্র ৩ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলা। এই জেলায় ১০৫ টি ইটভাটা রয়েছে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় ইটভাটাগুলোতে কাঠ পুড়লেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। ফলে বিপর্যয়ের মুখে জেলার কৃষি ব্যবস্থা ও পরিবেশ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
মেহেরপুর জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি ইটভাটাকে এমনটি জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) আতাউর রহমান।
তবে, মেহেরপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল বলছেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার ইটভাটাগুলোর ৭০ ভাগই এখন পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমান যে আইন, তা প্রতিপালন করে সারা দেশে একটি স্থানেও ইটভাটা গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আমরা ইটভাটা মালিক সমিতি পরিবেশ আইন কিছুটা শিথিল করে ছাড়পত্র দিতে অনুরোধ জানিয়েছি।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্করা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে । শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি করছে। অপরদিকে, গাছপালা উজাড় হওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছে, শুধু পরিবেশ নয়, মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে মাঠের উঠতি ফসল। যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে উঠার কারনে এমনিতেই কৃষি জমি কমে গেছে। যেটুকু কৃষি জমি অবশিষ্ট আছে, পরিবেশ দূষণের ফলে তাতেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ডিডি) স্বপন কুমার খা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন যাতে না হয় সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরেও প্রতি বছরই জেলাতে ইটভাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবে না। কিন্তু মেহেরপুর জেলায় এ আইনের কোনো তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদফতর কুষ্টিয়া উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ল্পদিনের মধ্যেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করবো।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খাঁন বলেন, আমরা কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভাটা মালিকদের কঠোর বার্তা দিয়েছি। ইট ভাটাতে শুরুতে কিছু কাঠ পোড়াতে হয়। এছাড়া যেসব ভাটাতে কাঠ পোড়াচ্ছে তাদের তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে সচেতন মহল বলছে, তালিকা দিতে হবে কেন? জেলায় অবৈধ কিছু হলে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। আর ইটভাটা তো প্রকাশ্য ঘটনা।