বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
আর্থিক উপার্জন। নিজের পায়ে দাঁড়ানো। স্বাধীন হওয়া। এই প্রসঙ্গগুলির সঙ্গে আমরা বেশ পরিচিত। প্রায়ই আমরা এই কথা শুনি। প্রত্যেকটি প্রত্যেকটির সঙ্গে সংযুক্ত। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, মেয়েরা নিজের শখ ও আহ্লাদ পূরণ করার জন্য় রোজগার করছে। ঠিক আছে, হাত খরচ চালানোর জন্য় রোজগার করা যেতে পারে। কিন্তু মেয়েরা কি শুধুই নিজের হাতখরচ চালানোর জন্য় রোজগার করেন? তাঁর উপার্জন কি শুধুই তাঁর স্বার্থপূরণের জন্য সীমাবদ্ধ। তা কিন্তু নয়। এই ধারণা প্রচলিত কারণ, অনেকেই এখনও মনে করেন, সংসার চালানোর মতো কোনও দক্ষতা মেয়েদের নেই। তাঁরা নিজের জন্য় উপার্জন করতে পারে। কিন্তু বাড়ি কেনা, গাড়ি কেনা বা একটা সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কোনও যোগ্য়তাই মেয়েটির নেই। তাই তাঁর উপার্জন ‘হাতখরচ’ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সমাজের এই বদ্ধমূল ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করেছেন অনেক মেয়ে। কখনও সিনেমা বা সাহিত্যে এবং কখনও বাস্তবে। মেয়েরাই তাঁদের পরিবারের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। বাড়ির পুরুষ সদস্যের অবর্তমানে সংসারের হাল ধরেছে। সংসারের দায়িত্ব সামলেছে। শ্রম ও উপার্জন দুই দিয়েই।
পরিবারের প্রধান কি পুরুষ সদস্যই ?
আসলে অতীতে পরিবারে পুরুষরাই উপার্জনকরতেন। তাঁরাই হতেন পরিবারের প্রধান। তিনিই সংসারের খরচ চালাতেন। সবার দায়িত্ব নিতেন। কিন্তু এই ছবি এখন তো পরিবর্তন হয়েছে। পরিবারের মহিলা সদস্যরাও উপার্জন করছেন। কিন্তু পরিবার প্রধান সেই পুরুষই। যিনি উপার্জন করেন। কিন্তু সত্য বলতে পরিবারের মহিলা সদস্যও কোনও পুরুষ সদস্যের থেকে এক অংশও কম নয়। তিনিও পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারেন। তাঁর উপার্জনেও চলতে পারে সংসার। পরিবারের সব সিদ্ধান্তে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের সম-ভূমিকা থাকতে পারে। আর তাই করা উচিত।
মেয়েদের উপার্জন কি শুধুই হাতখরচ(backbone of family)?
এই ধারণার মতো ভুল ধারণা আর কিছু হয় না। মেয়েরা শুধুই নিজের হাতখরচ চালানোর জন্য উপার্জন করেন না। বরং কখনও কখনও তাঁরাই হয়ে উঠতে পারেন সংসারের মেরুদণ্ড। তাঁদের উপার্জনে সংসার চলতে পারে। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব নিতে পারেন তাঁরা। নিজের পছন্দের পোশাক তো কিনতে পারেনই, সঙ্গে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের কথা মাথায় রেখে সবার জন্য একটা ফ্ল্যাটও কিনতে পারেন। এই বিষয়টা এতটাই স্পষ্ট। এরকমই মনে করেন স্কুল শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কাও। প্রায় ২২ বছর বয়স থেকে সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। বাড়ি ভাড়া দেন। বাবা ও মায়ের খেয়াল রাখেন। সংসারের খরচ সামলান। সঙ্গে নিজের ইচ্ছেপূরণের চেষ্টাও করেন। প্রিয়াঙ্কার মতোই অনেকে হয়ে ওঠেন তাঁদের পরিবারের মেরুদণ্ড। প্রিয়াঙ্কার মতোই গল্প ব্যাঙ্ককর্মী অপরুপার। তাঁর সমবয়সী অনেক বন্ধুই এখন চাকরি করে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর সংসার সামলাচ্ছে। কিন্তু অপরুপার উপর তাঁর পরিবারের দায়িত্ব। বাবার ওষুধ, মায়ের ডাক্তারের খরচ দেন। এরপর একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট কেনারও স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তাঁর কাছে বিয়েই প্রধান উদ্দেশ্য নয়।
স্বপ্ন দেখার সাহস
সংসারে যতটা পারি আমরা চাইলেই সেটুকু অর্থ দিতে পারি। আবার সংসারের দায়িত্বও নিতে পারি। সেটা মেয়েরা তো বুঝতে শিখছেন, কিন্তু এই সমাজ কবে বুঝবে? মেয়েদের স্বপ্ন দেখার সাহস আছে। স্বপ্নপূরণের সাহসও আছে। তাই আমরা পারি পরিবারের মেরুদণ্ডহয়ে উঠতে।