Home আইন-আদালত যশোর চেম্বার নির্বাচন স্থগিত

যশোর চেম্বার নির্বাচন স্থগিত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

যশোর:যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্বাচনের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখতে আদেশ দিয়েছেন যশোরের একটি আদালত। একজন ভোটারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশ পৌঁছানোর পর এক কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিবাদীদের সন্তোষজনক জবাব দেয়া, না দেয়ার ওপর নির্ভার করছে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্ধারিত তারিখে যশোর চেম্বারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি হবে না। তবে, নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক বলেছেন, তারা আদালতের আদেশ হাতে পাননি।

 আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ আট বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সাধারণ সদস্যরা। এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরেই নির্বাচন স্থগিত করতে এ মামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, তালিকায় অবৈধ ভোটার থাকায় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতো। এর মাধ্যমে সঠিকভাবে ভোটারতালিকা হালনাগাদ করার সুযোগ তৈরি হতে পারে। যা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে। তবে, সাধারণ ভোটাররা দাবি করেছেন দ্রুত আইনি জটিলতা কাটিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হোক।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার যশোর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান (ভোটার নম্বর-৬৪২) যশোর সদর সহকারী জজ আদালতে নির্বাচন সংক্রান্তে নানা অভিযোগ এনে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। যার নাম্বার-৮/২৩।  এ পিটিশনে যশোর চেম্বার অব কমার্সের বর্তমান প্রশাসক, সাবেক প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক একেএম আবু নওশাদ, দুইজন সদস্য মাহামুদুল হাসান ও ফিরোজ আহম্মদ এবং তিনজন ভোটার আলম ট্রেডার্সের মালিক মো. আলম, সরোয়ার ট্রেডার্সের মালিক গোলাম সরোয়ার, রহিম স্টোরের মালিক আব্দুর রহিম ও যশোর কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।
বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ৬ জুন তৎকালীন প্রশাসক সদস্যদের নবায়নের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে উল্লেখ থাকে নবায়নের সময় ২২-২৩ সালের ট্রেড লাইসেন্সের মুলকপিসহ দুটি ফটোস্ট্যাট এবং টিন নাম্বারসহ হালনাগাদ আয়কর প্রদানের সনদপত্রের মুলকপির সাথে দুই কপি ফটোকপি জমা দিতে হবে। অন্যথায় সদস্যপদ নবায়ন হবে না। পরে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বৈধ ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাঝে বাদী গত ১ জানুয়ারি জানতে পারেন আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আলম, সরোয়ার ট্রেডার্সের গোলাম সরোয়ার, রহিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহিম হালনাগাদ আয়কর প্রদানের মুল সনদপত্র দাখিল করেননি। অন্যের আয়কর সনদ জাল করে নিজেদের নাম বসিয়ে তা জমা দেন তারা। পরে বিষয়টি নিয়ে তিনি আরও খোঁজখবর নেন। এরপর জানতে পারেন শুধু তারাই নন, আরও অন্তত তিনশ’ জনকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ জানানোর সুযোগ না থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে এ মামলা করেন।
আবেদনে বাদী আরও উল্লেখ করেন, এভাবে নির্বাচন হলে সংস্থাটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। লুটতরাজ সৃষ্টি হবে। তাই তিনি নির্বাচন স্থগিত করে বৈধ ভোটারতালিকা প্রস্তুত করে সুষ্ঠ ভোট গ্রহণের সুযোগ দানের আবেদন জানান।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম (২) গ্রামের কাগজকে বলেন, তারা আদালতে বিভিন্ন অভিযোগ এনে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। এক পর্যায়ে বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সুজাতা আমিন নির্বাচন স্থগিতের আদেশ মঞ্জুর করেন।
অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আরও জানান, বিবাদীদের নোটিশ প্রাপ্তির এক কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে কারণ দর্শাতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন হওয়া না হওয়ার বিষয়টি আদালতে সন্তোষজনক জবাব দেয়া, না দেয়ার উপর নির্ভর করছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে সকল প্রস্ততি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে দুটি প্যানেলে অংশ নিচ্ছে। যার একটি হুমায়ুন কবির কবু, মিজানুর রহমান মিজান ও আসাদুজ্জামান মিঠুর নেতৃত্বাধীন ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদ। অন্যটি মিজানুর রহমান খান, শেখ আতিকুর বাবু, সাজ্জাদুর রহমান সুজা ও আব্দুল হামিদ চাকলাদার ঈদুলের নেতৃত্বাধীন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ।
ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের নেতা হুমায়ুন কবির কবু বলেন, শেষ মুহুর্তে এসে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। তারপরও তারা নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। তিনি বলেন ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সার্থে সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচন চাই’।
মামলার বিষয়ে হুমায়ুন কবির কবু বলেন, ‘আমাদের দাবি থাকবে এ বিষয়ে যেন দ্রুত নির্বাচন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচনের পথ পরিস্কার করে।’
ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতা সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান গ্রামের কাগজকে বলেন, একটি পক্ষ কখনোই চায়না নির্বাচন হোক। তারাই নির্বাচন বন্ধ করতে শুরু থেকেই চেষ্টা করছে। যার প্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এ মামলা করা হয়েছে। মূলত একটি মহল পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে পারে এমন আশংকায় এ মামলা করিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাচাই বাছাই ছাড়াতো আর ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়নি। ফলে এগুলো শুধুই অযুহাত। যেহেতু মামলা হয়েছে। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আইনানুগভাবেই বিষয়টির সমাধান করতে হবে।’
ইতিমধ্যেই গ্রুপ শ্রেণি থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, অভিযোগ রয়েছে ইজিবাইক চালক, দোকানের কর্মচারী ও ভবঘুরেরাও চেম্বারের সদস্য হয়েছেন। এর উপযুক্ত প্রমাণও পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে আর কনফিউশন থাকবে না। প্রকৃত ভোটাররা সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে, অবৈধরা বাদ যাবে। তবে, দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান শহিদুল ইসলাম মিলন।
উল্লেখ্য, নির্বাচন বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী দুই হাজার ৪৩জন ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাধারণ সদস্য রয়েছেন এক হাজার ৩১জন, সহযোগী সদস্য এক হাজার ১০ জন ও  গ্রুপ শ্রেণির ভোটার রয়েছেন দুইজন।
এ বিষয়ে নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক একেএম আবু নওশাদ গ্রামের কাগজকে বলেন, মূলত এখনো পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত বিষয়ে কোনো আদেশ তাদের কাছে আসেনি। ফলে এই মুহুর্তেই তিনি কিছু বলতে পারছেন না। নির্বাচনী কার্যক্রম তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বার অব কমার্সের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল বিজয়ী হয়। ২০১২ সালের ৩ মার্চ তারা দায়িত্ব বুঝে পান। ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ওই বছরের ১২ জুলাই ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
এদিকে, দীর্ঘ আট বছর পর যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর তাতে ভাটা লক্ষ্য করা গেছে। অনেক ভোটার এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত আইনি জটিলতা কাটিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।