নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তৃতীয় ও শেষ দিনে যুক্তি দিচ্ছেন গাম্বিয়া এবং মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হওয়া শুনানির প্রথমে রোহিঙ্গা গণহত্যার সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে অভিযোগকারী দেশ গাম্বিয়া।
শুনানির শুরুতেই গাম্বিয়ার প্রতিনিধি পল রাইখলার রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সাতটি মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল মিয়ানমারের প্রতিনিধি আদালতের কাছে এগুলো অস্বীকার করেননি।’
রাইখলার বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ৩৯২টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা মিয়ানমার অস্বীকার করেনি। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছে, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ও তাদের বিচার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী একমাত্র সামরিক আদালতেই সেনাবাহিনীর কারও অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়, সেনাবাহিনী নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার করবে না।’
ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের পেজ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও আদালতে আনেন গাম্বিয়ার প্রতিনিধি। যেখানে বর্ণবাদী বক্তব্যে মিন অং হ্লাইংয় বলেছিলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বলতে কোনো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। তারা মূলত বাংলাদেশিদের সমস্যা নিয়ে লড়ছেন।
পল রাইখলার আরও বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতনের কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়ে মিয়ানমার দাবি করছে, এর পেছনে গণহত্যার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না তাদের।’
শেষদিন যুক্তি উপস্থাপনে দেড় ঘণ্টা সুযোগ পায় গাম্বিয়া। বিরতির পর রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টায় নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার।
মঙ্গলবার আইসিজে-এ ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে তিন দিন ব্যাপী এই শুনানি শুরু হয়।
শুনানির প্রথমদিন মিয়ানমারের শীর্ষ নেতা সু চির উপস্থিতিতে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি। এতে তিনি গাম্বিয়ার আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
গণহত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ।
এই ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া।
প্রসঙ্গত, গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশন শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয়; বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।