Home সারাদেশ একখানা ‍উপহারের ঘর চান রজব আলী

একখানা ‍উপহারের ঘর চান রজব আলী

রজব আলী

আজহার মুনিম শাফিন, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে:জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়া এক পথিক রজব আলী (৫৯ ) ।

কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের গিয়াসনগর মাদ্রাসা বাজারে দোকানের বারান্দায় শুয়ে যার রাত পোহায়। বয়স  বাড়ায় এখন আর কেউ কাজে ডাকেনা। এলাকার লোকজনের ঝাকি জাল তৈরী করে যা পান তা দিয়েই কোন রকমে হোটেলে আহার জুটে । মৃত্যুর পূর্বে কোনো এক ঘরে রাত্রি যাপনের আক্ষেপ তাঁর । পরনে সেন্ডো গেঞ্জি, মাথার নিছে পুটলা দিয়ে পরম সুখে ঘুমোচ্ছেন সাটার বন্ধ দোকানের বারান্দায়। রুগ্ন-শুকনো চেহারা, ধুলো-বালুতে সয়লাভ পুরো শরীর। দেখে মনে হয় সাবান-সোডা লাগেনি মেলাদিন। খাবার পাবেনা ভেবে মশারাও কাছে আসছে না। অচেনা কেউ দেখে পাগল ভাবলেও  পরিচিতরা  জানেন উনার পরিচয় । 

কথা হয় রজব আলীর সাথে।দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে গৃহ ও ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছেন শুনে আশায় বুক বেঁধেছিলাম আমিও একটি ঘর পাবো। সে আশায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের সুপারিশ নিয়ে এসিল্যান্ড বরাবরে একাধিকবার  ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। উল্টো ধমক খেতে হয়েছে। ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের দরবারে একাধিকবার গিয়েও দেখা পাইনি। আমার মত গরিবের মূল্যায়ন কোথাও নেই। ভাগ্যের কাছে আমি হেরে গেছি, বাজারের বন্ধ দোকানের বারান্দা-ই এখন আমার ঠিকানা।

তিনি বলেন, বয়স  হয়ে যাওয়ায় এখন আর কেউ কাজে ডাকেনা। এলাকার লোকজনের ঝাকি জাল তৈরী করে যা পাই তা দিয়ে কোন রকমে বাজারের হোটেলে খাই। কখনও ১-২দিন না খেয়েও কাটাতে হয়। ভিটে মাটি নাই, শ্বশুড় বাড়িতে থাকতাম । সারাদিন কাজ করে  বৌ-বাচ্চাদের নিয়ে কোনোভাবে ডাল-ভাতে চলছিলো সংসার। ৭ বছর আগে বৌ মারা গেলে এটাও ছাড়তে হয় ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার উত্তর গিয়াসনগর এলাকার বাসিন্দা মোঃ রজব আলীর জন্ম হয় ১৯৬২ সালে এক হতদরিদ্র পরিবারে। অভাব অনটনে বেড়ে ওঠা রজব আলী কিশোর বয়সেই হারান পিতা-মাতাকে। পৈত্রিক ভিটে-মাটি না থাকায় কাজের সুবাদে এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় পান। যুবকে পরিণত হওয়ার পর ওই আত্মীয়রা রজব আলীকে বিয়ে করান। পরিবার বড় হতে থাকে তাঁর। একটি ছেলের আশায় ৫টি মেয়ে সন্তানের জনক হন রজব আলী। কাজ আর খাবারে সংকুলান না হওয়ায় চাকরি চলে যায় তাঁর। আশ্রয় নেন শশুড় বাড়িতে। সেখানে একটি ঝুপড়ি ঘরে থেকে গায়ের জোর খাটিয়ে দিন মজুরি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ডাল-ভাতে চলছিলো সংসার। মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় কোন রকমে মেয়েদেরকেও বিয়ে দেন। মেয়েদের স্বামীর পরিবারেও নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

প্রায় ৭ বছর আগে স্ত্রী হারালে শশুর বাড়ির ঝুপড়িও ছাড়তে হয় তাঁকে ।  বয়সের ছাপ আর ঠিকানাহীন রজব আলী অনেকটা ভেঙে পড়েন মানসিকভাবে। দিনমজুরের কাজেও ডাকা হয়না তাকে। শেষতক একটি চা-বাগানে গেটম্যানের চাকরি জোটে । নানা রোগ আর অধিক বয়সের কারনে দু বছর পর সেটিও চলে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন দোকানের বারান্দাই হয়ে ওঠে রজব আলীর ঠিকানা।

এখনও প্রতি রাতে গিয়াসনগর মাদ্রাসা বাজারের দোকানের বারান্দায় গেলে দেখা মেলে তাঁর। এ বিষয়ে জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু জানান, রজব আলী প্রকৃতপক্ষে একজন গৃহ-ভূমিহীন হতদরিদ্র লোক। আমি ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে সুপারিশ করে একটি প্রত্যানপত্রও দিয়েছিলাম।