Home আন্তর্জাতিক রতন টাটা ‘অত্যাচারী’, তাড়িয়ে দেওয়া সাইরাসকেই ফের টাটার চেয়ারম্যান পদে বসাল কোর্ট

রতন টাটা ‘অত্যাচারী’, তাড়িয়ে দেওয়া সাইরাসকেই ফের টাটার চেয়ারম্যান পদে বসাল কোর্ট

বোর্ড সদস্যদের আস্থা হারিয়েছেন। এই অভিযোগে তিন বছর আগে টাটা মোটর্সের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিল্পপতি সাইরাস মিস্ত্রিকে। বুধবার ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল রায় দিল সাইরাসের পক্ষে। তাঁকে ফের পুরানো পদে নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে টাটা গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান এমেরিটাস রতন টাটা বিরুদ্ধেও কঠোর বক্তব্য পেশ করেছে কোর্ট।

দুই বিচারকের প্যানেল বলেছে, ১১ হাজার কোটি ডলার মূল্যের টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদ থেকে যেভাবে সাইরাসকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা ‘অন্যায্য’। তাঁর বদলে নতুন চেয়ারম্যান যেভাবে নিয়োগ করা হয়েছে, তা ‘বেআইনি’। রতন টাটা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি রীতিমতো অত্যাচার করেছেন সাইরাসের ওপরে। কোর্ট এই রায় দেওয়ার পরেই টাটা মোটর্স লিমিটেড এবং টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস লিমিটেডের শেয়ারের দর কমেছে। কিছুদিনের মধ্যেই বিদেশে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার গাড়ির কারখানায় বড় মাপের খরচ কমাতে চলেছে টাটা গ্রুপ। ভারতে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কাও সামলাতে হচ্ছে ওই গ্রুপকে। তার ওপরে কোর্টের এই রায়ে টাটা গ্রুপের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তাঁরা মনে করেন, টাটা গ্রুপ নিশ্চয় এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবে। কিন্তু মামলা চলার ফলে শেষ বিচারে বিনিয়োগকারীরাই সমস্যায় পড়বেন।

কোর্ট জানিয়েছে, সাইরাস এখনই পুরানো পদ ফিরে পাবেন না। তিনি আরও চার সপ্তাহ বাদে টাটা মোটর্সের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হবেন। ওই সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে টাটা মোটর্স আপিল করতে পারবে।

সাইরাস মিস্ত্রিকে যখন টাটা মোটর্সের শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তখন রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল কর্পোরেট মহলে। সাইরাস মিস্ত্রি বর্তমানে শাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে আছেন। ১৯৯১ সালে তিনি ওই সংস্থায় ডিরেক্টর হিসাবে যোগ দেন। তাঁর পরিবারই ওই সংস্থার মালিক।

২০০৬ সালে তিনি টাটা সনস লিমিটেডের বোর্ডে যোগ দেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে হন ওই সংস্থার ডেপুটি চেয়ারম্যান। ২০১২ সালে তিনি হন ওই সংস্থার চেয়ারম্যান। তাঁর আগে ওই পদে ছিলেন শিল্পপতি রতন টাটা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সাইরাস মিস্ত্রি টাটা গ্রুপ অব কোম্পানিজের ডিরেক্টরের পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার পরেই তিনি ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি)-র দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগ ছিল, অংশীদারদের একটি অংশের বক্তব্য শোনা হচ্ছে না। টাটা গ্রুপের মধ্যে নানা অনিয়ম হচ্ছে।

সাইরাস মিস্ত্রিকে সরিয়ে টাটা গ্রুপ রতন টাটাকে অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান নিয়োগ করে। এনসিএলটি-র মুম্বই বেঞ্চ এর আগে বলেছিল, টাটা সনসের বোর্ড সাইরাস মিস্ত্রিকে এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে বেআইনি কিছু করেনি। বোর্ড সদস্যরা তাঁর ওপরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। সাইরাস মিস্ত্রির অভিযোগ ছিল, গ্রুপের মধ্যে নানা অনিয়মের জন্যই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

টাটা সনসের পক্ষ থেকে গ্রুপের জেনারেল কাউন্সেল কোর্টের রায় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, টাটা সনস এখন ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের রায় খতিয়ে দেখছে। টাটার অংশীদারদের মিটিং-এ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কোর্ট কীভাবে তা নাকচ করে দিয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। আবেদনকারী যে প্রতিকার চেয়েছিলেন, বাস্তবে তাকে ছাপিয়ে গিয়ে রায় দিয়েছে কোর্ট।

বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, টাটা সনস গভীরভাবে বিশ্বাস করে, তার বক্তব্য সঠিক। তারা উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। টাটা সনস তার প্রত্যেক অংশীদারকে জানাচ্ছে, তারা সব সময় সঠিকভাবে কাজ করেছে। বরাবর আইনের পথে চলেছে। আগামী দিনেও চলবে।