বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
কলকাতা: প্রয়াত টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার পদ্মবিভূষণ রতন টাটা। ৮৬ বছর বয়স শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশিষ্ট এই শিল্পপতি। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
দু’দিন ধরে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছিল তাঁর ব্লাড সুগার লেভেল ফল করেছে। যদিও নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুরাগীদের জানিয়েছিলেন, তিনি ভালো আছেন। উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। তবে এ দিন সকালেই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রতন টাটার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার থেকেই ICU-তে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। হলো না শেষরক্ষা। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা বিফল করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশিষ্ট এই শিল্পপতি। এ দিন সন্ধ্যায় রতন টাটার প্রয়াণের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম জানান শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা।
শোকবার্তায় তিনি লেখেন, ‘ঘড়ির কাঁটা থমকে গিয়েছে। টাইটানের জীবনাবসান ঘটেছে। সততা, নৈতিকতা এবং জনহিতৈষী ছিলেন রতন টাটা। ব্যবসা-বাণিজ্যের জগৎ এবং তার বাইরেও তিনি ছিলেন আলোকবর্তিকা। আমাদের স্মৃতিতে সর্বদাই থাকবেন তিনি।’
শিল্পপতি, মানবতাবাদী, পরোপকারী এবং ন্যাশনাল আইকন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন রতন টাটা। সমাজের সমস্ত স্তরেরই তিনি ছিলেন সমাদৃত। জামশেদজি টাটার প্রপৌত্র রতন টাটা ছোট একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেটিই এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা টাটা গোষ্ঠী। অটোমোটিভ, এয়ারোস্পেস, প্রতিরক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, স্টিল, রিয়্যাল এস্টেট, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, অ্যাভিয়েশন, ই-কমার্স এবং পর্যটনে টাটা গোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত এবং ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। নিত্যনৈমিত্তিক কার্যকলাপ থেকে বয়সজনিত কারণেই রতন টাটা আপাতত বিরতি নিয়েছেন। তবে একাধিক চ্যারিটেবল ট্রাস্টে তাঁর উপস্থিতি রয়েছে। ২০০৮ সালে রতন টাটা পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।
রতন টাটার প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স হ্য়ান্ডল পোস্টে তিনি লেখেন, ‘শ্রী রতন টাটাজি একজন দূরদর্শী শিল্পপতি ছিলেন। সহানুভূতিশীল এবং অভূতপূর্ব মানুষও ছিলেন বটে। ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং মর্যাদাশীল একটি বাণিজ্য সংস্থার সুযোগ্য নেতা ছিলেন তিনি। তবে এর বাইরে বহু ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। রতন টাটার মানবিকতাবোধ, দয়ালু মন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রশংসনীয়।’
শোকজ্ঞাপন করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘টাটা সন্সের উপাধি-সহ অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন টাটার প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। ভারতের শিল্প-বাণিজ্য মহলে তাঁর স্থান ছিল সর্বাগ্রে। একজন জনহিতৈষী নেতা ছিলেন রতন টাটা। ভারতে বণিক মহল এবং সমাজে তাঁর জীবনাবসান অপূরণীয় ক্ষতি তৈরি করল। তাঁর পরিবার এবং সহযোগীদের প্রতি আমার সমবেদনা।’
টাটা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয়তম রতন আর নেই। তাঁর প্রতি আপনাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধায় আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি সশরীরে হয়তো আর আমাদের মধ্যে রইলেন না, তবে ওঁর মানবিকতা, নম্রতা, উদারতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবে।’
শোকবার্তা জানিয়েছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড। কেবলমাত্র টাটা গ্রুপ নয়, গোটা ভারতের কাছে এ ক্ষতি অপূরণীয়। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই শেষবার রতন টাটার সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তগুলি স্মৃতিচারণ করেছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শোকবার্তায় বলেন, ‘ব্যক্তিগত ক্ষতি। তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি অসাধারণ ছিল। তাঁর দয়ালু মন এবং মার্জিত অভিব্যক্তি আমার জীবনে দাগ ফেলেছিল। তাঁর নেতৃত্বের সমতুল্য কেউ নয়। তিনি ছিলেন কোটিতে একজন।’