Home ব্যাংক-বিমা রপ্তানি শ্লথতায় চাপে পড়ছে ব্যাংক খাত

রপ্তানি শ্লথতায় চাপে পড়ছে ব্যাংক খাত

দেশের রপ্তানি খাত এখনো শ্লথতা কাটিয়ে উঠতে না পারায় ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স।
মহামারী করোনার ক্ষতি থেকে আর্থিক খাতকে সুরক্ষা দিতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব পদক্ষেপের কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের ব্যাংক খাত মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক গেল বছর করোনা পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা শিথিল করে রাখে।পাশাপাশি বিরূপমানে শ্রেণিকরণ (ডাউনগ্রেডিং) বন্ধ রাখা হয় গেল ডিসেম্বর পর্যন্ত। মুডি’স বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত এসব সুবিধার কারণেই দেশে গেল বছর খেলাপি ঋণের হার ছিল তুলনামূলক কম। ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের একই সময়সীমায় এ হার ছিল ১২ শতাংশ।

এর বিপরীতে গেল বছর আশঙ্কাজনক শ্লথতার মধ্যে ছিল দেশের রপ্তানি খাত। বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও টেক্সটাইলের মতো রপ্তানি শীর্ষ খাতগুলো ধুঁকেছে সবচেয়ে বেশি। গেল বছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ মহামারীর আগ মুহূর্তে ২০১৯-এর শেষেও দেশে মোট বিতরণকৃত ব্যাংকঋণের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশই ছিল আরএমজি ও টেক্সটাইল খাতে দেয়া।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীর কারণে রপ্তানিমুখি পোশাক খাতের বেচাকেনা কমেছে। এর ধারাবাহিকতায় চাপের মুখে পড়ে গিয়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। সরকারি প্রণোদনার অর্থে সাময়িকভাবে পতন ঠেকানো সম্ভব হলেও মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থানে ফেরেনি দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। রয়ে গেছে করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ। ফলে এ খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত সময় মেনে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সেখানকার খুচরা বাজারও বন্ধ। এরই প্রভাব পড়ছে রপ্তানি খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এরই মধ্যে নেয়া পদক্ষেপগুলো ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, এখনই তা ভাবার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আগামীতে প্রয়োজনীয় আরো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে। বিজিএমইএসহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠন আমাদের কাছে বেশকিছু দাবি জানিয়েছে। এসব বিষয়েও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

মহামারীর আঘাত থেকে সুরক্ষা দিতে গেল বছর ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা তিনবার শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুডি’সের ভাষ্যমতে, করোনার কারণে খেলাপি ঋণ ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিশেষ ছাড়ের কারণে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। মহামারীর শুরুতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপ দেশের ঋণমানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

তবে গেল মাসের শেষে অশ্রেণিকৃত মেয়াদি ঋণ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে এ সুবিধা আর না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুডি’স বলছে, বিশেষ এ সুবিধা উঠে যাওয়ায় এখন ঋণগ্রহীতাদের সময়মতো কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়বে। এতে মহামারীতে চাপে পড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চ্যালেঞ্জ বেড়ে যেতে পারে।

শেষ পর্যন্ত এ পদক্ষেপ ঋণমানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে মুডি’স। এ বিষয়ে সংস্থাটির ভাষ্য হলো, এতে ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। একই সঙ্গে দেশে চালু ব্যাংকগুলোর সম্পদের মানের তুলনাযোগ্যতাও নিশ্চিত হবে। এ পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোকে মন্দায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি কারা স্বেচ্ছায় খেলাপি হচ্ছে, তাদেরও চিহ্নিত করা যাবে। ফলে নিয়ন্ত্রকরাও ব্যাংক খাতের আর্থিক সামর্থ্য সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রপ্তানি খাতে উৎসাহ বাড়ানোরও পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

আগামীতে পরিস্থিতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতির বিচারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ পাওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক