বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে অন্যান্য দেশের মতো ইউরোপ, আমেরিকার জনগণও দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। সেখানকার মানুষকে খাদ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে, পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের বিক্রি কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সে আশঙ্কা দূর করে সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। এ আয় চলতি আগস্টের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার চেয়ে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
সবমিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স থেকে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
রবিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়ের উল্লম্ফনের কারণেই বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইপিবির প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে যে রপ্তানি আয় হয়েছে তার ৮২ দশমিক ৭ শতাংশই তৈরি পোশাক থেকে এসেছে। এরমধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৯১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয় ৩১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৩৪ শতাংশ। এ সময় হোম টেক্সটাইল ও বিশেষায়িত টেক্সটাইলেও রপ্তানিতে যথাক্রমে ৫৩ ও ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি জুলাই-আগস্ট মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২২ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
জুলাই-আগস্টে রপ্তানি আয় বাড়লেও বড় ধাক্কা খেয়েছে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, হিমায়িত মাছ এবং কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানিতে। এ সময় কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ১৪ শতাংশ। এ খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর চলতি জুলাই-আগস্টে কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ২৯ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি।
এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে সার্বিক রপ্তানিতে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ছিল হতাশার চিত্র। আগের অর্থবছরের চেয়ে এ খাত থেকে ৩ শতাংশের মতো কম বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে পাট খাতেও আশা জাগাতে শুরু হয়েছে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম এসেছে।