গ্রাম ও হাটবাজারে উৎসবের আমেজ
আজহার মুনিম শাফিন, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : কুলাউড়ায় তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় ১৩টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫৬জনসহ সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ ইউপি সদস্য পদে ৭শত প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় উপজেলার প্রতিটি গ্রাম ও হাটবাজারে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। উৎসবের আমেজের সাথে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সকল আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী সমর্থকরা ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি । ভোটাররাও অপেক্ষায় তাঁদের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৬জন, নারী ইউপি সদস্য পদে ১৬১ জন, সাধারণ ইউপি সদস্য পদে ৪৮৩ জন ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে এবার ২জন নৌকা নিয়ে প্রতিদন্ধিতা করছেন। নৌকা বঞ্চিত এক বর্তমান চেয়ারম্যানসহ আওয়ামীলীগের ৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে ৮ জন বিএনপি নেতা প্রতিদন্ধিতা করছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে ও স্থানীয় হাটবাজারে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক এবং ভোটারদের আকর্ষণ করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য প্রার্থীরা।
কর্মধা ইউনিয়নের বাসিন্দা রেহান আহমদ, বিষ্ণু দে, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা শামীম আহমেদ,রুহেল আহমদ, পৃথিমপাশার নিতাই চন্দ, রাউৎগাঁওয়ের মোহাম্মদ মান্না, সুমন আহমদসহ একাধিক স্থানীয় ভোটার জানান, এবার ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী থাকলেও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সরাসরি কোন প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনে জয় পরাজয়ে রাজনৈতিক দলের প্রভাব তেমন দেখা যাচ্ছেনা। তাই এবার লড়াই হবে মূলত নৌকার প্রার্থীদের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর ব্যাক্তি ইমেজ-ই ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কে কোন দলের সেটা বড় নয়।
তারা জানান, অনেক প্রার্থী নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর কথা শুনতে পারছি। বিভিন্ন সভা ও উঠান বৈঠকে অনেক প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করছেন। যেটা নির্বাচনী প্রচারণার পরিবেশকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে। এ বিষয়টি ভোটারদের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো অব্দি উৎসবের আমেজে প্রচার প্রচারণা চলছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এ পরিবেশ থাকলে কোন সহিংসতা ছাড়াই ভোট দিতে পারবো। চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পদে অনেক প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার, নির্ধারিত সময়ের পরও মাইক বাজিয়ে প্রচার, বিভিন্ন দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটি পরিহার করা উচিত।
ভাটেরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক দলীয় প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকরা ভোটারদের মনে আতঙ্ক তৈরীর জন্য ভোট কেন্দ্র দখলসহ নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন।ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে না যায়। বিষয়টি আমি নির্বাচনী আচরণবিধি অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
কর্মধা ইউপি স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুল ইসলাম আজাদ , জয়চন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কমর উদ্দিন আহমদ, কুলাউড়া সদর ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলী বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচারণায় প্রতিদন্ধি প্রার্থীরা প্রচারণার নামে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটি ভোটার ও আমাদের কর্মীদের জন্য বিভ্রান্তি এবং শঙ্কার। আমাদের ইউনিয়নের সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেট রাখার জন্য বিষয়টি নির্বাচন রিটার্ণিং কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছি।
ব্রাহ্মণবাজার ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমদুদ হোসেন, কাদিপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আহমদ গিলমান, জয়চন্ডীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রব মাহবুব, কুলাউড়া সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছাদ্দেক আহমদ নোমান জানান, ঈর্ষান্বিত হয়ে ভোটারদের বিভ্রান্তি ও নির্বাচনের পরিবেশ বিশৃঙ্খল এবং সরকার দলীয় প্রার্থীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীরা নিজেরাই বিভিন্ন উস্কানীমূলক বক্তব্য ও গুজব ছড়াচ্ছেন। নৌকার প্রচারণার সময় প্রতিদন্ধি প্রার্থীরা তাঁদের প্রচার মাইক দাড় করিয়ে এবং মিছিলের মাধ্যমে উস্কানীমূলক শ্লোগান দিয়ে প্রচারণায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে প্রশাসন জরিমানা করছে তাঁদের। আর ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রতিদন্ধি প্রার্থীরা বলছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন দিয়ে হয়রানী করছেন। নির্বাচনে নিজেদের পরাজয় জেনে সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কৌশলে ভোটার ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা মো. আহসান ইকবাল বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখনো পর্যন্ত কোন সহিংসতা ছাড়াই উৎসবের আমেজে প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। আজ শনিবার কেন্দ্রে পাঠানো হবে নির্বাচনী সকল আনুষাঙ্গিক সামগ্রী এবং ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে পাঠানো হবে ব্যালট পেপার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এটি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করছি। প্রার্থীরাও নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমাদের বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাচ্ছেন। ভোটাররা আগামী ২৮ তারিখ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারেন সে ব্যাপারে প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।