Home সারাদেশ রহিমা বেগমের অন্তর্ধান রহস্য

রহিমা বেগমের অন্তর্ধান রহস্য

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে নারীর অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছিল, তাকে অবশেষে পুলিশ খুঁজে বের করেছে। কিন্তু রহিমা বেগম কেন হারিয়ে গিয়েছিলেন, অথবা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাকে অপহরণ করেছিল, সেসব প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট জবাব এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।

২৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর রহিমা বেগমকে শনিবার রাতে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ২৭ দিন ধরে রহিমা বেগমের কন্যা মরিয়ম মান্নান তাঁর মায়ের খোঁজে ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তৈরি করেন। তার আবেগময় পোস্টগুলো শত শত মানুষ শেয়ার করেন এবং মূলধারার গণমাধ্যমে এ নিয়ে নিয়মিত খবর বেরুতে থাকে।

রহিমা বেগমের অন্তর্ধান নিয়ে নানা ধরণের জল্পনা চলছিল। তিনি কি গুমের শিকার হয়েছেন, নাকি তাকে অপহরণ করা হয়েছে, নাকি তিনি নিজেই আত্মগোপনে গেছেন- এ রকম নানা ধরনের কথাবার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছিল।

শ্বাসরুদ্ধকর এই কাহিনীতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়, যখন মেয়ে মরিয়ম মান্নান এক নারীর লাশকে তার মায়ের লাশ বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, এটি তার মায়ের লাশ নয়।

রহিমা বেগমের সাথে পুলিশ এখন কথা বলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল নাকি তিনি নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন সেটা তদন্ত করে বের করা হবে।

ঘটনার সূত্রপাত ২৭ আগস্ট, খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ায়। সেখানেই থাকেন রহিমা বেগম। সেদিন রাত দশটায় তিনি ঘরের উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।

এ ঘটনায় তার এক মেয়ে অপহরণের মামলা করেন।

রহিমার বেগমের অপর মেয়ে মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে ব্যাপকভাবে তার মায়ের নিখোঁজের বিষয়ে পোস্ট দিতে থাকেন। তার সন্তানেরা ঢাকায় মানব-বন্ধন করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার নিয়ে খবর প্রকাশ করা হয়। ঘটনাটি বেশ আলোড়ন তোলে।

পরিবারের পক্ষ থেকে রহিমা বেগমের ঘটনা নিয়ে একটি অপহরণ মামলা করা হয়। পুলিশ এই মামলায় ছয় জনকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার দাবি করেন, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। রহিমা বেগমের অন্তর্ধানের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

গত শুক্রবার এই ঘটনা এক নাটকীয় মোড় নেয়। সেদিন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশকে নিজের মায়ের বলে দাবি করেন রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান।

শুক্রবার তিনি ফুলপুর থানায় যান। এ সময় লাশটি তার মায়ের দাবি করে নিয়ে যেতে চান।

লাশের পরনের কাপড় দেখে তিনি এটি তার মায়ের লাশ বলে দাবি করেন। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষারও আবেদন করেন।

কিন্তু এই কাহিনীর আরো এক শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয় অধ্যায় তখনো বাকি। পরদিন শনিবার ফরিদপুরের এক বাড়ি থেকে জীবিত রহিমা বেগমকেই উদ্ধার করে পুলিশ।

রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

তবে দেশের কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, রহিমা বেগম জানিয়েছেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে কারা কেন তাকে অপহরণ করেছিল, অপহরণের পর কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, এসবের বিস্তারিত তিনি বলতে পারেন নি।

খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপার মুসফিকুর রহমান বলেছেন, তাদের কাছে আপাতদৃষ্টিতে এটা অপহরণের ঘটনা নাও হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন ‘তার সাথে ব্যাগ ছিল, ওষুধ ছিল, আই-ড্রপ ছিল, কাপড় ছিল। একজন অপহরণ হলে তার কাছ এসব জিনিস থাকার কথা নয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটা অপহরণ নাও হতে পারে। তবে অধিকতর তদন্তের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

পুলিশ বলছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে রহিমা বেগমকে আদালতে পাঠানো হবে জবানবন্দী দেয়ার জন্য।

 

সূত্র : বিবিসি