নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে: রামগড়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের বিশালায়তনের সরকারি লেকে রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। পানি দূষণের কারণে লেকের জলজ জীববৈচিত্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে, পর্যটক ও সৌন্দর্যপিপাসুদের কাছে আর্কষণীয় হয়ে ওঠা শত বছরের এ প্রাকৃতিক লেক এলাকার পরিবেশ এখন পচা মাছের দুর্গন্ধে বিষিয়ে উঠেছে।
উপজেলা পরিষদের সামনে প্রায় সাড়ে ছয় একরের সরকারি মালিকানাধীন এ প্রাকৃতিক লেক ঘিরে পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হয় ২০০৩ সালের দিকে। লেকের পাড়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল, শহিদ মিনার, লেকের ওপর অবস্থিত ঝুলন্ত সেতু এবং এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জেলার সীমানা ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তের পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়। এ কারণে লেকের পাড়ে ব্যক্তি উদ্যোগে চালু করা হয় দুটি রেস্টুরেন্ট। গ্রাহকদের হাত ধোয়া এবং খাবারের প্লেট, বাটি ইত্যাদি ধোয়া পানি ফেলা হয় লেকে।
এছাড়া অন্যান্য তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবারের বর্জ্যও সরাসরি লেকের পানিতে ফেলা হয়। পানির ওপর তেলের স্তর ভাসতে থাকে। এছাড়া বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের পানিও ড্রেনের মাধ্যমে লেকে ফেলা হয়। এতে দূষিত হয়ে পড়ে লেকের পানি। পানি দূষণের কারণে লেকে ব্যাপকহারে মাছ মরা শুরু হয়।
গত ২০-২৫ দিন ধরে এ অবস্থা দেখা গেছে। এসব মরা মাছ পচে-গলে লেকের পানিও দুর্গন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি দূষিত হওয়ায় লেকে গোসল করে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে এখন অনেকেই গোসলসহ লেকের পানি ব্যবহার করছেন না।
রামগড় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাশ জানান, ‘রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় বর্জ্যের কারণেই লেকের পানি দূষিত হয়েছে। পানি পরীক্ষা করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় বর্জ্য খেয়ে মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া তেলের স্তর পড়ায় পানির সঙ্গে অক্সিজেনের মিশ্রণ হচ্ছে না। এতে মাছের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াও বিঘ্নিত হচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, ‘মৃত মাছ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পেট থেকে তৈলাক্ত তরল রস বের হয় এবং মুখ ও শরীরের ক্ষত রয়েছে।’ রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন, ‘লেকের পাড়ের রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত বর্জ্যের কারণেই পানি দূষণ ও মাছ মারা যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটনের পরই রেস্টুরেন্টের মালিকদের ডেকে এনে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে লেকের সঙ্গে সংযুক্ত সব বেসিন ও ড্রেনেজ লাইন অপসারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘লেকের সঙ্গে সংযুক্ত পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ির সবগুলো ড্রেন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ রামগড় পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল বলেন, এ লেকটি আমাদের অমূল্য সম্পদ। এভাবে এটাকে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।