Home সারাদেশ যে সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে

যে সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে

নীহার রঞ্জন সাহা

বাগেরহাট: রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের বগুড়া নদীর ওপর নির্মিয়মান খেয়াঘাট সেতুটির কাজ শেষ হয়নি গত ৪ বছরেও। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে ওই সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন ১০ গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, হুড়কা ইউনিয়ন থেকে রামপাল সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি জনসাধারণের জন্য দ্রুত যেন খুলে দেওয়া হয়।

এদিকে, রামপাল উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী দাবি করেছেন, করোনা মহামারি এবং সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে স্থানীয় দুই ব্যক্তির করা মামলার কারণে দুই দফায় নির্মাণ কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। তাই সময়মতো খুলে দেওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলজিইডি’র অর্থায়নে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয় বগুড়া খেয়াঘাট সেতুটির। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইটি অ্যান্ড জেই এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার ১৩৩ টাকা। ইতোমধ্যে সেতুর ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

রামপাল উপজেলা এলজিইডি’র অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি। নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী জুন মাসে উদ্বোধন করা হবে।বর্তমানে সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হুড়কা ইউনিয়নের বেলাই, ভেকটমারী, গাজিখালী, কাঠামারী, নলবুনিয়া, গজগজিয়া, হুড়কা, চাড়াখালী-১, চাড়াখালী-২ ও ছিদামখালী গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সহজ মাধ্যম এই সেতু। এর একপাশের সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। কাজ চলছে অপর পাশের সংযোগ সড়ক নিয়ে। যে পাশের সড়কের কাজ চলছে, সেই পাশে বাঁশের মই দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা অমল দাস বলেন, ‘কয়েক বছর ধইরে দেখতিছি এই সেতুটার কাজ হচ্ছে, কাজ কবে যে শেষ হবে তার তো ঠিক ঠিকানা নেই। রামপাল সদর, মোংলা ও বাগেরহাট যাওয়ার জন্যই আমাগো এই নদী পার হয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া, আমাগো তো আর কোনো উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে এর ওই মই বেয়ে যাতি হয়।’

আরেকজন সুজন মজুমদার বলেন, ‘হুড়কা ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তারা কৃষিকাজ, মৎস্য ও মোংলা ইপিজেড এ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। বগুড়া নদী পার হয়ে, তাদের শহরের যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া, যাতায়াতের বিকল্প যে পথটি রয়েছে, সেটি প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুড়ে যেতে হয়। তাই হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম সেতুটি দ্রুত মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানাই।’

হুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে বগুড়া খেয়াঘাট সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে এর নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে চললেও একটা সময় করোনা মহামারি ও জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার কারণে কাজ থেমে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় অনেক আগেই। সমস্যা হলো এক অংশের সংযোগ সড়ক নিয়ে। সংযোগ সড়কটির কিছু অংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকায় তারা মামলা করেন। এজন্য কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শেষ করে জনগণের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

রামপাল উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মো. গোলজার হোসেন বলেন, ‘করোনা মাহামারি ও সীমানা জটিলতায় মামলার কারণে সেতুর কাজ দুই দফা পেছানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এর ৯৫ শতাংস কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এখন সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী জুন মাসে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’