বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
করোনা ভাইরাসের আবহে প্রাণীকূল মানুষবিহীনভাবে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন দেশে। এমনকি সিংহও নিভৃতে শান্তি উপভোগ করছে, এইরকমই মনবিগলিত দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের নতুন কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
ছবিগুলিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, একদল সিংহ গোটা রাস্তা জুড়ে আরাম করে কেউ ঘুমোচ্ছে বা আরাম করছে। সবেচেয়ে অবাক করা ঘটনা ফটোগ্রাফার রিচারড সোরির উপস্থিতি তাঁদের এতটুকুও শান্তিভঙ্গ করতে পারেনি। গোটা পৃথিবীকে উপেক্ষা করে নির্বিকার ও নির্লিপ্তভাবে জীবনের স্বাদগ্রহণে ব্যস্ত ওই সিংহের দল।
ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের তরফে একটি ট্যুইটে জানানো হয়েছে, “ওই সিংহের দল সাধারণত কেম্পিয়ানা কনট্র্যাকচুয়াল পার্কের বাসিন্দা যা ক্রুগারের পর্যটকেরা দেখেন না, এদিন বিকলে তাঁরা অরপেন রেস্ট ক্যাম্পের বাইরের অংশে টার রোডে গোটা রাস্তা জুড়ে শুয়েছিল”।
অন্যান্য স্বাভাবিকদিনে, পর্যটকবেষ্টিত থাকে এই অঞ্চল তবে করোনা লকডাউনের জন্য মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক। রাস্তায় শুয়ে থাকার ছবিটা ভীষণ আস্বাভাবিক। কারণ ট্র্যাফিক।
বিশ্বের মানুষের কাছে রাস্তার মাঝের এই ছবি অবাক করা হলেও তিনি জানিয়েছেন প্রাণীদের ব্যবহারে বিশেষ কোনও পরিবর্তন আসেনি। তবে তাঁরা সাধারণত পর্যটক ঘেরা জায়গা এড়িয়ে চলে এবং মানুষশূন্য হলেই সেই জায়গা নিয়ে নেয়।
মানুষকে মনে রাখতে হবে কেম্পিয়ানা কনট্র্যাকচুয়াল পার্ক এখনও বেশিরভাগই এখনও বুনো। মানুষের উপস্থিতি ছাড়া বনজীবন সবচেয়ে বেশি সক্রিয়”।
সমুদ্র সৈকত দখল নিয়েছে কুমিররা
লকডাউনের পর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের টুরিস্ট স্পট জনশূন্য। আর সেই সুযোগে সেই স্থানগুলিতে ফিরে আসছে সেখানকার আদি বাসিন্দারা। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনের ফলে নিজেদের হারানো বাসস্থান যেন ফিরে পাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এবার সেরকমই এক দৃশ্য দেখা গেল মেক্সিকোর ওয়াক্সাকার (Oaxaca) সমুদ্র সৈকতে। বেশ কয়েকদিন ধরে পর্যটকদের অনুপস্থিতিতে সমুদ্র সৈকত এখন দখল নিয়েছে সারি সারি কুমির।
তবে মেক্সিকোর ওক্সাকায় কুমির নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পর্যটক থাকাকালীনই ওয়াক্সাকায় সমুদ্র সৈকতে কুমির দেখা গিয়েছে। তবে তা কালেভদ্রে একটা-দুটো। সাধারণ মানুষের ভিড় ও হই-হট্টগোলের ভয়ে পথ ভুল না করলে এই সৈকতে সাধারণত কুমিররা ওঠে না। সৈকত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ওয়াক্সাকা উপহ্রদে মূলত কুমিরদের দেখা যায়। তবে, সেখানেও যে তারা খুব শান্তিতে থাকতে পারে তা বলা যায় না। কুমির দেখতে সারা বছরই বোটে চড়ে ভিড় জমান স্থানীয় পর্যটকরা। বোট থেকে জলে পড়ে কুমিরের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে এই কদিন যেন একটু শান্তিতেই আছেন ওক্সাকার আদি মালিকরা।
ওয়াক্সাকার সমুদ্রতটে বালিতে বসে বেশ কয়েকটি বিশালাকায় কুমির। নির্ঝঞ্ঝাটে দুপুরের রোদ পোহাচ্ছে তারা। মেক্সিকোর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেই ছবি।
গত কয়েকদিনে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই লকডাউনের প্রভাবে বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক পর্যটন স্থানে নিশ্চিন্তভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। খোদ পশ্চিমবঙ্গেরই কলকাতা ও শহরতলিতে লকডাউনের রাস্তাঘাটে রাতে বেশি করে চোখে পড়ছে ভামবেড়াল।
আসলে আমাদের মতো পৃথিবীটা ওদেরও। ওদের প্রত্যাবর্তন যেন আরও একবার মানুষকে মনে করিয়ে দেয় সেই কথা।
কিছু প্রাণী মেরে অন্যদের খাওয়ানো হবে
এমন দুর্দিন আসবে কে ভেবেছিল। একে তো ভাইরাসের প্রকোপ। তার মধ্যে খাবারের সঙ্কট। মানুষ থেকে শুরু করে পশুপাখি, গোটা জীবজগত যেন অভূতপূর্ব এক সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ হ্রাস করতে বিশ্বের বহু দেশের সরকার ইতিমধ্যে লকডাউন ঘোষণা করেছে। আর তাতেই দেখা দিয়েছে প্রবল খাবারের সঙ্কট। এমনিতেই লকডাউন উঠলে প্রচুর মানুষের কাজ হারানোর শঙ্কা রয়েছে। তবে যে শুধু মানুষেরই ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তা নয়। লকডাউনের জেরে প্রবল সমস্যায় পড়েছে প্রাণীরাও। এক প্রজাতিকে রক্ষা করতে বিপদ বাড়ছে আরেক প্রজাতির।
জার্মানির নিউ মুনস্টার চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এই চিড়িয়াখানায় ১০০ প্রজাতির ৭০০ প্রাণী থাকে। লকডাউনের জেরে প্রবল খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খাবারের বরাদ্দ কমেছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি অনুদান এসে পৌঁছয়নি চিড়িয়াকানা কর্তৃপক্ষের হাতে। ফলে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেক পশুপাখিকে। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানা নেই। তবে কিছুদিনর মধ্যে মজুত খাবারে টান পড়বে। আর সেই দিনের কথা ভেবে এখন থেকেই আশঙ্কায় ভুগছে কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার পরিচালক ভেরেনা কাসপারি জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থায় আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে হয়তো। শেষ পর্যন্ত প্রাণীদের খাবারের টাকা জোগাড় না হলে কিংবা সাপ্লায়ার যদি খাবার সরবরাহ করতে না পারে, তাহলে কিছু প্রাণীকে মেরে অন্যদের খাওয়াব। প্রাণীদের না খাইয়ে রাখার থেকে এই সিদ্ধান্ত ভাল।
বছরের এই সময় আবহাওয়া ভাল থাকে। ইস্টারের ছুটিতে উত্তর জার্মানির এই চিড়িয়াখানায় ভিড় হয় প্রবল। প্রাণীদের জন্য অনুদান মেলে। এবার করোনাভাইরাসের জন্য সেসব বন্ধ। লকডাউন চলছে। নিউ মুনস্টার চিড়িয়াকানা বন্ধ হয়েছে গত ১৫ মার্চ। কবে আবার খুলবে তাও জানা নেই কর্তৃপক্ষের। কোন প্রাণীদের সবার প্রথমে হত্যা করা হবে তারও একটি তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে চিড়িয়াখানার পরিচালক সেটি জানাতে চাননি। জানা গিয়েছে তালিকায় সবার শেষে রয়েছে একটি মেরু ভাল্লুক। ভিটাস নামের সেই ভাল্লুকটির উচ্চতা ১২ ফুট।