বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে এসেছেন মিন্নি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় আজ বুধবার ( ৩০ সেপ্টেম্বর ) ঘোষণা করা হবে।
বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের এ রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে বরগুনা আদালত প্রাঙ্গণ। আদালত ও এর আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ।
বুধবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মিরা দেখেছেন, আদালত প্রাঙ্গণজুড়ে পুলিশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। আদালতে আগত আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজ বুধবার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছেন রিফাতের পরিবার। ন্যায্য বিচার প্রত্যাশা করছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
মিন্নির ভাগ্য নির্ধারণ আজ
নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষী থেকে আসামি বনে যান নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখায় তাকে। এরপর হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। বিচারিক কার্যক্রম শেষে জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামের জিম্মায় রয়েছেন মিন্নি।
রায় প্রকাশের পর কী ঘটবে মিন্নির ভাগ্যে তা নিয়ে এখন নানা আলোচনা চলছে বরগুনা জেলাজুড়ে। মিন্নি ন্যায়বিচার পাবেন কি না তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা রয়েছে দেশের অনেক সাধারণ মানুষের মাঝেও।
বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলযোগে আদালতেে এসেছেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। সকাল ৮টা ৫২ মিনিটের দিকে বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতে আসেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। এ সময় তার সঙ্গে তার বাবা ও চাচা ছিলেন।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে একটি হত্যাকাণ্ড সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত (রিফাত শরীফ)কে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকেলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা মো. আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়ে একে একে গ্রেপ্তার করেন এজাহারভুক্ত আসামিদের।
রিফাতের ওপর হামলার ছয়দিন পর ২ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন এ মামলার আলোচিত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
মামলা তদন্তের একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সম্পর্ক ও হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পান। এরপর মিন্নিকে এই মামলায় সাক্ষী থেকে আসামি করা হয়। রিফাত হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নি আসামি হয়ে যাওয়ায় মামলাটি মোড় নেয় অন্যদিকে।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ছয়দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রাপ্ত বয়স্ক আসামিদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চার্জ গঠন করেন। তবে মামলার অন্যতম আসামি মুসা বন্ডকে এখনো পলাতক রয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্নের মধ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করে আদালত।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে আদালত।