Home অন্যান্য গ্রামবাংলার ঐতিহ্য “লাঙ্গল-জোয়াল” হারিয়ে যাচ্ছে

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য “লাঙ্গল-জোয়াল” হারিয়ে যাচ্ছে

ইদ্রিস আলী, সিরাজগঞ্জ থেকে:

এক সময়ে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের কৃষি মাঠ জুড়ে গরু ও লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ প্রদ্ধতির প্রচলন ছিল। কালের স্রোতে লাল সবুজের গ্রাম বাংলায় গরু দিয়ে হালচাষ আজ বিলুপ্তির পথে। কাক ডাকা ভোরে কৃষকের সঙ্গে লাঙ্গল ও জোয়াল কাধে নিয়ে জমি চাষ করতে মাঠে যাওয়ার দৃশ্য এখন আর নজরে পড়েনা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারে কৃষি মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরু, লাঙ্গল,জোয়াল ও মই।

দেশের অন্যতম সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলা। এ জেলায় কৃষি, মৎস্যসহ নানা রকম ফসল উৎপাদনে অন্যতম। তারই ধারাবাহিকতায় চৌহালীর যমুনা চরসহ কৃষি মাঠের দিকে তাকালেই দেখা যেত সারি বেঁধে লাঙ্গল, জোয়াল আর গরু দিয়ে জমি চাষ করার দৃশ্য। রাখালেরা জমি চাষ করতো আর ভাটিয়ালি গান গাইতো কী ভালো লাগতো ৷ “বাড়ির পাশে ব্যাতের আড়া, হাল ধরেছে ছোট দেওড়ারে”, ও “রোদের মধ্যে হাল বাও তুমি রোদে পুড়ে তোমার গাও, আমার বাড়ি আইসো বন্ধু ঠান্ডা পানি খাইয়া যাও” ৷

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাথে সাথে আধুনিকতার স্পর্শে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লগেছে কৃষি মাঠে। ফলে কৃষি মাঠ থেকে কৃষকের সেই ভাটিয়ালি গান লাঙ্গল ও গরু দিয়ে জমি চাষ করতে দেখা যায় না কৃষকদের।

কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশ হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙ্গল জোয়াল, চিরায়ত বাংলার অপরুপের সন্ধান করতে গেলে কৃষি উপকরণ লাঙ্গল,জোয়াল,মইসহ হালের গরুর কথা অবশ্যই আসবে। গরু ও লাঙ্গলের জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার যন্ত্র ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার।

এক সময়ে দেশে কৃষক বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করতো হাল চাষ ও মোটাতাজা করার জন্য। তারা নিজের জমি ও অন্যের জমি চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। আর হালের গরু দিয়ে জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা। আধুনিক যন্ত্র কৃষি মাঠ দখল করায় গরু দিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। দেশের ঐতিহ্য গরুর গাড়ি ও লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ আজ বিলুপ্তির পথে।

বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২/১ জন কৃষক লাঙ্গল ও গরু দিয়ে হালচাষ করছে। চৗহালী উপজেলার ঘুশুরিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, গরু দিয়ে ক্ষ্যাত আল বাওয়াই আমার কাম ছিল। গরু দিয়া আল বাওয়ার কদর ছিল আগে, এখন আর তা নেই, যন্রপাতি আসাতে আল বাওয়া বর্তমানে ডিজিটাল হয়ে গছে। ছোট বেলায় ক্ষেতে কাজ করতাম, বাড়িতে আল বাওয়ার জন্য ২ থেকে ৪ জাড়া গরু পালতাম। জমিতে কাম করার জন্য ১ জোড়া বলদ ও ১ জোড়া গাভি পালন করতাম, আর কাঠ, লোহার ফাল দিয়ে লাঙ্গল, বাঁশ দিয়ে জোয়াল, মই, লড়ি ও গরুর মুখের টানা ব্যবহার হতো।

উপজেলা কৃষি অফিসার জেরীন আহম্মেদ বলেন, লাঙ্গল ও গরু দিয়ে হালচাষ কৃষি মাঠ থেকে বিলুপ্ত প্রায়। সরকার কৃষি মাঠকে যান্ত্রিকরণ করেছে। এতে উৎপাদন খরচ কমেছে এবং কৃষক লাভবান হচ্ছে।