লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্য আহত হয়েছেন।
তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টারে (এইউবিএমসি) ভর্তি করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
আহত অন্যদের ইউনিফিলের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার/এম্বুলেন্সযোগে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত।
শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌসদস্যদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে। এ দুর্ঘটনায় নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয় এর বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নৌবাহিনী জাহাজ, ইউনিফিল সদর দফদর ও বৈরুতস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের সাথে নৌবাহিনী সদর দফতরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
ইউনিফিল হেড অব মিশন এবং ফোর্স কমান্ডার ও মেরিটাইম টাস্কফোর্স কমান্ডার সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনার অব্যবহিত পরই বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমান সরেজমিনে বানৌজা বিজয় পরিদর্শন করেন এবং আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২০১০ সাল হতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে।
-বাংলাদেশ প্রতিদিন
পূর্ববর্তী সংবাদ:
পরপর দু’টি ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লেবাননের রাজধানী বৈরুত। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিস্ফোরণে কার্যত তছনছ এ শহর।
এখনও পর্যন্ত যতদূর জানা গেছে, অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন এই ঘটনায়। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জখম প্রায় ৩০০০।
জানা গেছে, শহরের বন্দর এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটেছে। ভাইরাল হওয়া ছবি-ভিডিওয় দেখা গেছে, বন্দর এলাকায় বহু বড় বড় বাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে জানা যায়, ওই এলাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরেও পৌঁছেছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। ছবি বা ভিডিও দেখে ধারণা দু’টি বিস্ফোরণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলেও, কীসের থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা এখনও পরিষ্কার নয় কারও কাছে। ভিডিওয় দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পরে ঘন ধোঁয়ার মেঘ কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এ কথা স্পষ্ট। অনেকে এখনও বহুতলের নীচে আটকা পড়ে রয়েছেন বলেও আশঙ্কা।
বৈরুত সমুদ্র বন্দরের আশেপাশের কোনও এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটলেও এর অভিঘাত ছড়িয়েছে বহুদূর। কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ঘরবাড়ির কাচ ভেঙে গেছে। আশপাশের সমস্ত দোকান ধ্বংস হয়েছে। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওয় দেখা গেছে, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটছেন মানুষজন।
ওই এলাকার বাসিন্দা এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “বিকট শব্দ শুনলাম, আর ঘন কালো ধোঁয়ার মেঘ। ব্যালকনিতে বেরোতেই আরও একটি বিস্ফোরণ, একরকম ছিটকে গেলাম আমরা। এমনভাবে গোটা বাড়িটা কাঁপছিল, যেন মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছে।” গোটা এলাকায় অসংখ্য গাড়ি দগ্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় পড়ে রয়েছে ধ্বংসের চিহ্ন। অ্যাম্বুল্যান্স ছুটোছুটি করতে থাকে ঘটনার পরেই। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তাবাহিনী।
প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বুধবার দেশটির জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণের পর লেবানন থেকে ১৫০ মাইল দূরের এলাকাও কেঁপে ওঠে। সাইপ্রাসের একটি এলাকা বিস্ফোরণের পর কেঁপে ওঠে।
খবরে বলা হয়েছে, বৈরুতের বাসিন্দারা দূর থেকেও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান। রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা বিস্ফোরণের পর কেঁপে উঠে। শহরে প্রাণকেন্দ্র থেকে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হরিরির সদর দপ্তরসহ বিস্ফোরণে অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন।
লেবাননের একটি হাসপাতালের নার্স বলেছেন, এখানে আহত ৪০০ জনের চিকিৎসা চলছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলের ১০ কিলোমিটার দূরের বাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এলাকায় স্থানীয়ভাবে তোলা ছবি ও ভিডিওতে ভাঙা কাচ ও দরজা-জানালার ভগ্নাংশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।