Home First Lead দূষণে বাড়ছে শিশু মৃত্যু, ভ্রূণের ব্রেন-ফুসফুসেও পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত কণা: গবেষণা

দূষণে বাড়ছে শিশু মৃত্যু, ভ্রূণের ব্রেন-ফুসফুসেও পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত কণা: গবেষণা

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

ধোঁয়া-দূষণের বাড়বাড়ন্ত বিশ্বজুড়ে। একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়েও মানব সভ্যতার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বায়ু দূষণ (Air Pollution)। দূষণের কালো মেঘ ধীরে ধীরে গ্রাস করছে পৃথিবীকে। দূষণের জেরে শিশু মৃত্যুর হারও বাড়ছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। ল্যানসেটের একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বিষাক্ত বাতাসের কারণে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে ফুসফুস, হার্ট, লিভারের। এমনকি গর্ভস্থ শিশুর ব্রেন, ফুসফুসেও পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত কণা।

Exposure to Air Pollution in Utero May Be a Factor In Children's Later  Behavior Problems | TIME.com

বেলজিয়ামের হ্যাসেল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম নওরোট ও তাঁর টিম এই গবেষণা চালিয়েছেন। সেই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, শহরাঞ্চলগুলির দূষিত এলাকায় গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক, ফুসফুস এবং যকৃতে দূষিত কণা (Air Pollution) পাওয়া গেছে। প্রসূতিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বাতাসের দূষিত কণা, ধোঁয়া, কার্বন-ডাই-অক্সাইড মায়ের থেকে শিশুর শরীরেও ঢুকছে। ফলে প্রসবের আগেই গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক, ফুসফুসে সেই বিষাক্ত কণা (Air Pollution) ঢুকে যাচ্ছে যা পরবর্তী সময়ে দুরারোগ্য জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

Toxic air pollutant particles found in brain, lungs of unborn babies, study  finds

করোনা মহামারী মানুষজনকে গৃহবন্দী করেছিল। লকডাউন দশায় নিজে থেকেই পরিশোধিত হয়েছিল বাতাস। এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছিল কার্বন-ডাই অক্সাইডের (CO2) মাত্রা (Air Pollution)। বিষ্ণ উষ্ণায়ণের হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে বলেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন পরিবেশবিদেরা। কিন্তু নিউ নর্ম্যাল শুরু হতেই দেখা গেল বিপরীত ছবি। মানুষ যত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে ততই বায়ুদূষণের পাল্লা ভারী হচ্ছে। শিল্প-কারখানায় কার্বনের নিঃসরণের মাত্রা বাড়ছে, যানবাহনের ধোঁয়ায় ফের বিষ ছড়াচ্ছে বাতাসে, ক্ষেত-খামার থেকে মিথেন গ্যাসের মাত্রা বাড়ছে। সব মিলিয়ে ফের অশনি সঙ্কেত দেখছেন পরিবেশবিদরা।

Air pollution particles found on foetal side of placentas – study | Air  pollution | The Guardian

হু “এয়ার পলিউশন অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ২০১৬ সালে ভারতে-বায়ু দূষণের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হু-এর রিপোর্ট অনুসারে,  ২০১৬ সালে ভারতের পাঁচ বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ শিশু মারা গিয়েছিল যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। আর এখন এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক। কারণ বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা আগের থেকে বহুগুণে বেড়ে গেছে।

করোনা কালে গত বছর বাতাসে কার্বণ নিঃসরণের মাত্রা কমেছিল ৫.৪ শতাংশ। এ বছর থেকে ফের তা ঊর্ধ্বমুখী। এর অন্যতম প্রধান কারণই হল, মানুষের তৈরি দূষণ। কলকারখানা ধোঁয়া, গ্রিন হাউস গ্যাসের বাড়বাড়ন্ত। প্লাস্টিক দূষণের কারণে পরিবেশে রাসায়নিকের মাত্রাও বাড়ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে বিষাক্ত কণা মিশছে মাটি, জলে। চলতি বছর মে মাসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৪১৭.১৪ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ৪১৯.৫ পিপিএম।

গবেষকরা বলছেন, শুধু ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম ২.৫) নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলে ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (পিএম)-গুলি খুব সহজে মিশে যেতে পারে। কিন্তু যদি পিএম কণাগুলির ব্যাস বেশি হয় তাহলে বায়ুমণ্ডলে মিশে যেতে সময় লাগে বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র, গাড়ি, ট্রাক, অগ্নিকাণ্ড, ফসল পোড়ানো ও কারখানার চিমনি থেকে এই দূষণ-কণাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে বিষ-বাস্প তৈরি করে। এই বিষাক্ত বাতাসের কারণেই শ্বাসজনিত সমস্যা, ফুসফুসের সংক্রমণ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছাড়াও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ফি বছর প্রাণ যায় অন্তত ৬ লক্ষ শিশুর।