বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
শরণখোলা (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের শরণখোলায় ব্রি—৭১ ও ব্রি—৭৫ আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ফসল কাটাও শুরু করেছেন চাষিরা। উপকূলীয় শরণখোলায় দুই—তিন বছর ধরে চাষ হচ্ছে এই আগাম জাতের ধানের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারই ফলন ভালো হয়েছে। ধানের দামও ভালো পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে এ বছর ১০০ হেক্টর জমিতে ব্রি—৭১ ও ব্রি—৭৫ ধানের চাষ হয়েছে। যেসব জমির ধান কাটা হয়েছে তার পরিমাপ করে দেখা গেছে হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে সাড়ে ৪ মেট্রিক টন ফলন হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় ফলন অনেক ভালো। এক বিঘা জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত কৃষকের খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। আর বর্তমান বাজারে এক মণ ধাণ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা। এতে চাষিরাও ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। এই ধান চাষে আগ্রহও বাড়ছে চাষিদের।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মাঠে মাঠে সোনালি ধানে দোলা। ধুম পড়েছে সেই পাকা ধান কাটার। কৃষি শ্রমিকরা দল বেধে কাস্তে হাতে মাঠে পাকা ধান কাটায় ব্যবস্ত সময় পার করছেন। চাষি—শ্রমিক সবার মুখেই সোনালি হাসি।
রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের চাষি মাসুদ মীর জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে ব্রি—৭১ ও ব্রি—৭৫ আগাম জাতের ধান চাষ করে বেশ খুশি। কারণ তিনি তার দুই বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। ফসল পেয়েছেন প্রায় ১০০মণ।
বর্তমান বাজারদর হিসেবে বিক্রি করলে প্রায় এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। এ বছর যেভাবে ফলন হয়েছে তাতে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে চাষ করবেন বলে জানান এই চাষি।
উত্তর কদমতলা গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম হাওলাদার, কালাম খান, অহেদ খান, দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের চাষি আবুল মোল্লা, ও খোকন মোল্লা জানান, গত দুই বছরে তারা এতো ফলন দেখেননি। এবার তারা অনেক লাভবান হবেন। তাদের জমির ফলন দেখে আগামীতে গ্রামের অনেকেই এই আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
খোন্তাকাটা গ্রামের ধান ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন, ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এ বছর ধানের প্রচুর দাম। গত বছর এক মণ ধান কিনেছেন সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এবার সেই ধান এক হাজার টাকা দরে মণ কিনতে হচ্ছে। তারা ধান কিনে চাল তৈরি করে বিক্রি করে থাকেন। কেবলমাত্র ধান কেনা শুরু করেছেন তারা। চাল তৈরিতে আরো সময় লাগবে।
শরণখোলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা মশিউল আলম জানান, উপজেলায় এবার মোট ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টরে। এই জাতের চারা রোপণের পর থেকে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যেই ফসল কাটার উপযোগী হয়। রোগবালাইও কম আক্রমণ করে। এবার আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন চাষিরা।
এই উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকতা আরো জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি জমিতে এই ধান চাষ করা হবে। এই আগাম জাতের ধান ওঠার পরে এই একই জমিতে শাক—সবজিসহ শীতকালিন নানা জাতের ফসল চাষ হচ্ছে। এতে এক জমিতে দুই—তিন ধরণের ফসল উৎপাদন করে আরো বেশি লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
তবে আগাম ধান ওঠায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ধান কাটা শেষ হয়নি। সম্পূর্ণ ধান কাটা ও মাড়াই করতে আরো কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগবে। নতুন চাল বাজারে সরবরাহ হলে বাজারে চালের দাম কমতে পারে বলে ধারণা করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।