বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বুধবার দুপুর দুইটার দিকে জালালাবাদ থানায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করেন কামরুল। এ সময় তার সঙ্গে আবুল হোসেন ও মো. হাসান ছিলেন। তাদের সবার বাড়ি টিলাগাঁও এলাকায়। এদিকে হত্যার ঘটনায় বুলবুলের কথিত প্রেমিকার সম্পৃক্ততা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন।’
বুলবুল হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে ওইদিনই একটি হত্যা মামলা দায়ের করে জালালাবাদ থানায়। মামলার পর পুলিশ জিজ্ঞসাবাদের জন্য প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আটকের কথা জানায়। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশে অপারগতা জানানো হয়।
উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে টিলাগাঁও এলাকার আবুল হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার কামরুল আহমদ ও মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা জানায়। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও বুলবুলের খোঁয়া যাওয়া ফোনের বিষয়ে কামরুল জানায়, ওই ফোন ও অস্ত্র তার বাসায় আছে। তখন তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। তার ঘরের সিলিংয়ের পশ্চিম দিক থেকে বুলবুলের অপ্পো মডেলের ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ঘরের দক্ষিণ দিকের সানশেডের এক কোণা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আজবাহার আলী বলেন, আটতকৃদের ফোন কল চেক করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে তদন্ত চলছে।
ঘটনার পর বুলবুলের বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বুলবুলের বান্ধবীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি তার সাথে বুলবুলের সম্পর্ক ছিল, তারা সেখানে ঘুরতে যায়। এতে তাদের একা পেয়ে বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। পরে শুধু তার মোবাইল নিয়ে যায়, তবে তার বান্ধবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত আছে এমন কোনো আলামত জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল চেক করে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, তার বান্ধবীর কাছে শুনেছে বুলবুলের লাশ বিকেলে ক্যাম্পাসে আনা হবে। তাই তার শেষ চেহেরা দেখার জন্য সে কাউকে কিছু না বলে হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পাসে চলে আসে।
এদিকে বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বুলবুলের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পবিরারের সাথে সবসময় থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বুলবুলের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত আছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করব। অন্যদিকে বুলবুলের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে লোকপ্রশাসনে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, বুলবুলের পরিবারকে এককালীর ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে তার পরিবারকে।
এ ছাড়া এদিন সকালে বুলবুলের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শোক র্যালি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় বান্ধবীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত গাজী কালুর টিলায় ঘুরতে যায় বুলবুল। পরে সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন তিনি। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বুলবুল মাটিতে লুটে পড়ে। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, বুলবুল আহমেদ শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় (২০১৮-১৯ সেশন) বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলে ২২৮ নম্বর রুমে থাকতেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি নরসিংদী সদরের চিনিশপুরম থানার নন্দিপাড়ার গ্রামের বাসিন্দা মৃত মো. ওহাব মিয়ার ছেলে।