খালাস প্রক্রিয়া কচ্ছপ গতিকেও হার মানিয়েছে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: ইউক্রেন থেকে আসা একটি জাহাজের গম খালাস চলছে ৬ মাস ধরে। অথচ যে পরিমাণ গম জাহাজটি নিয়ে এসেছে তা খালাসে সর্বোচ্চ সময় লাগার কথা ১৩ দিন। এমন ধীরগতিতে পণ্য খালাস পরিস্থিতি বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনামকে ক্ষুন্ন করছে বলে শিপিং সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
জাহাজটির নাম আইস বুল। বারবাদোস পতাকাবাহী এই জাহাজ আমদানিকারকদের প্রায় ৬৬ হাজার মেট্রিক টন গম নিয়ে এসেছে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর। সেই থেকে বহির্নোঙরে রয়েছে। এই পরিমাণ গম খালাসে সপ্তাহ দুয়েকের মত সময় লাগতে পারে, কিন্তু ৬ মাসেও কেন তা সম্ভব হয়নি?
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালে নির্মিত আইস বুল গিয়ারলেস জাহাজ। দৈর্ঘ প্রায় ২২৫ মিটার। পরিবহণ ক্ষমতা প্রায় ৭৫ হাজার টন। পণ্য খালাসের জন্য নিজস্ব ক্রেন নেই। ক্রেনবিহীন এ রকম জাহাজের ভাড়া অনেক কম। পাওয়াও যায় সহজে। বিপত্তি অন্যখানে। চট্টগ্রাম বন্দরে এত বিশালকায় জাহাজ জেটিতে ভিড়ার সক্ষমতা নেই। ২০০ মিটারের কম হলে জেটিতে আসতে পারে। অবশ্য, একবার বিশেষ ব্যবস্থায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ একটি জাহাজ ভিড়ানো হয়েছিল। আইস বুল একদিকে গিয়ারলেস, অন্যদিকে ওভারলেংথের। তাই জেটিতে ভিড়তে পারছে না, ক্রেনবিহীন হওয়ায় বহির্নোঙরেও নিয়ম মাফিক গম নামাতে পারছে না। নিজস্ব ক্রেনযুক্ত জাহাজ থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হাজার টন গম খালাস করা যায়। সেক্ষেত্রে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দৈনিক ৫০০ টন/ ৬০০ টনের বেশি নামানো সম্ভব হচ্ছে না বিশালকায় আইস বুল থেকে। আবার কোন কোন দিন নামানো যায় মাত্র ১০০ টন থেকে ১৫০ টন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়ি নির্মাণ কাজে যে ক্রেন ব্যবহার করা হয়, সে রকম ক্রেনের সাহায্যে নামানো হচ্ছে গম। তাও নিয়মিত নয়। কোনো কোনোদিন ক্রেন বিকল হয়ে কাজ ব্যাহত হয়। এ কারণে মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে জাহাজটির গম খালাসে। যেভাবে লাইটারিং চলছে তাতে আরও কত মাস পরে আইস বুল বাংলাদেশ ত্যাগ করতে পারবে তা অনিশ্চিত।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক এক পরিচালক এ প্রসঙ্গে বললেন, জাহাজটির পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় বিরাজমান অচলাবস্থায় শিপিং বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, মূল্যবাণ বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা গম যথাসময়ে অভ্যন্তরীণ বাজারেও আসেনি।
অপরদিকে, সময় মত ফিরতে না পারায় বিশাল ক্ষতির মুখে জাহাজটির মালিক তুরস্কের নোভা জেমি এনসেন্টেলিজি। জাহাজটি সম্ভাব্য সময়ে বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে পরবর্তী ব্যবসার যে শিডিউল ছিল তাও তাকে বাতিল করতে হয়েছে। তাছাড়া, জ্বালানি এবং নাবিকদের খাবার, বেতন-ভাতা বাবৎ বিশাল অংকের খরচ প্রতিদিন তাদের ওপর।
আইস বুল-এর স্থানীয় এজেন্ট চট্টগ্রাম শিপিং এজেন্সির কর্মকর্তা জানান, এত বড় গিয়ারলেস জাহাজের পণ্য নামানোর সক্ষমতা এখানে না থাকার বিষয়টি শুরুতে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপরও চার্টারার পক্ষ জাহাজটি পাঠিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী তারাই। তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে গম খালাস শেষের দিকে। শিগগিরই জাহাজটি নোঙর তুলতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।