মুতাছিন বিল্লাহ, জীবননগর থেকে: শিমুল ফুল লাল পাপড়ি মেলে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। দূর থেকে হঠাৎ দেখলে ঠিক মনে হবে, কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন। গাছ জুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল জানান দিচ্ছে নতুন ঋতু’র।
কোনোই সুবাসনা থাকলেও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাস্তার পাশে শিমুল ফুলের সৌন্দর্য দেখে অবশ্যই প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়বে। পাখপাখালি আর মৌমাছিদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত দৃশ্য যেকোনো পথচারীকে দাঁড়িয়ে দেখতে বাধ্য করবেই। কিন্তু ইট-পাথরের শহুরে অপরূপ সাজ সজ্জিত শিমুল গাছ ও ফুল প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ফাল্গুনের শুরুতেই গাছে গাছে সীমিত আকারে ফুল ফুটে। প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে শিমুল ফুল সব গাছে এখনো ফোটেনি। গাছে গাছে ফুল ফুটলে আরও সুন্দর লাগবে।
ফাগুনের আগুন মানেই যেন শিমুল ফুল। ডালে ডালে লাল আগুন ছড়িয়েই জানান দেয় বসন্তের আগমন। নিঃসঙ্গ পথের পাশে শিমুলের গাছ যেন অনন্য সৌন্দর্য। যুগে যুগে শিমুল ফুল নিয়ে গান, গল্প, কবিতা লিখেছেন অনেক সাহিত্যিক। বাংলাদেশে এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে শিমুল ফুলের দেখা মেলে না।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে জীবননগরের বেশ কিছু এলাকায় সড়কের নিঃসঙ্গ পথের পাশে শিমুল ফুলে প্রকৃতি যেন অপরূপ সৌন্দর্য ভরে গেছে।
প্রকৃতিতে ঘেরা মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা বকুল মিয়া তার অনূভূতি জানিয়ে বলেন, হঠাৎ করে যদি দূর থেকে শিমুল গাছের দিকে তাকানো যায়, মনে হবে লাল গালিচা বিছানো। ওই দৃশ্য চোখে পড়লে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মনোহরপুর ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে রাস্তার পাশে শত বছরের অসংখ্য শিমুল গাছ চোখে পড়তো। আর ফাল্গুন মাসে এসব শিমুল গাছে গাছে শিমুল ফুলের সমারোহ জানান দিতো, যে বসন্তকাল এসে গেছে। এখন শিমুল গাছ চোখে পড়ে না। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য।
শিমুল ফুলের সৌন্দর্য দেখে সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইশাবুল ইসলাম মিল্টন মোল্লা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শিমুল গাছ থেকে প্রাপ্ত তুলা দিয়ে লেপ-তোষক ও বালিশ বানানো হয়। এগুলো ব্যবহার যেমন আরামদায়ক তেমন স্বাস্থ্যসম্মত। শিমুল গাছ সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোনো কার্যক্রম নেই। জনসচেতনতার অভাবে জীবননগর উপজেলা থেকে হারিয়েই যাচ্ছে শিমুল গাছ।
তিনি আরও বলেন, ৯০ দশকের শুরুতে অমর ২১ শে ফেব্রুয়ারি এলে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য শিশু-কিশোরদের ফুলের সংকট দেখা যেতো। ফুল না পেয়ে শৈশবে অনেকেই লাল টকটকে শিমুল ফুল দিয়ে ফুলের তোড়া বানিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতো। আজকাল শিশুরা শিমুল গাছ ও ফুলটি চেনে না। একদিকে শিমুল গাছ বিলুপ্তির কারণে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত তুলা থেকে। শিমুলগাছ সংরক্ষণে কৃষিবিভাগ থেকেও কোনো ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে না।
জীবননগরের সচেতন মহল মনে করেন, নির্বিচারে শিমুলগাছ নিধন ও চারা রোপণ না করার কারণে এ অঞ্চল থেকে শিমুল গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারি নজরদারি বাড়ানো আহ্বান জানান।